এ অধ্যায়ের পাঠ্যসূচী
- ল্যাবরেটরির নিরাপদ ব্যবহার (Safe Use Of Laboratory)
- ল্যাবরেটরি ব্যবহার বিধি (Principles of Laboratory Use)
- অ্যাপ্রোন (Apron)
- নিরাপদ গ্লাস বা গগলস (Safty Glass)
- মাস্ক (Mask)
- হ্যান্ড গ্লাভস (Hand Gloves)
- নিওপ্রিন গ্লাভস (Neoprene Gloves)
- ভিনাইল গ্লাভস (Vinyl Gloves)
- জিটেক্স গ্লাভস (Zetex Gloves)
- লাটেক্স গ্লাভস (Latex Gloves)
- নাইট্রাইল গ্লাভস (Nitrile Gloves)
- প্রাকৃতিক রবার গ্লাভস (Natural Ruber Gloves)
- ল্যাবরেটরি ব্যবহারের সোনালি বিধি ( Golden Rules of Laboratory Use)
- গ্লাস সামগ্রী ব্যবহারের নিরাপদ কৌশল (Safe Use of Glass Apparatus)
- টেস্টটিউব ব্যবহারের নিরাপদ কৌশল (Safe Use of Testtube)
- বিকার ব্যবহারের নিরাপদ কৌশল (Safe Use of Beaker)
- ব্যুরেট ব্যবহারের নিরাপদ কৌশল (Safe Use of Burette)
- পিপেট ব্যবহারের নিরাপদ কৌশল (Safe Use of Pipette)
- লিবিগ শীতক ব্যবহারের নিরাপদ কৌশল (Safe Use of Libig Condencer)
- রিয়েজেন্ট বোতল ব্যবহারের নিরাপদ কৌশল (Safe Use of Reagent Bottle)
- থার্মোমিটার ব্যবহারের নিরাপদ কৌশল (Safe Use of Thermometer)
- মেজারিং সিলিন্ডার ব্যবহারের নিরাপদ কৌশল (Safe Use of Measuring Cylinder)
- আয়তনমিতিক ফ্লাস্ক ব্যবহারের নিরাপদ কৌশল (Safe Use of Volumetric Flask)
- কনিক্যাল ফ্লাস্ক ব্যবহারের নিরাপদ কৌশল (Safe Use of Conical Flask)
- পৃথকীকরণ ফানেল ব্যবহারের নিরাপদ কৌশল (Safe Use of Separating Funnel)
- ওয়িং বোতল ব্যবহারের নিরাপদ কৌশল (Safe Use of Woing Bottle)
- গ্যাসজার ব্যবহারের নিরাপদ কৌশল (Safe Use of Gas Jar)
- ফানেল ব্যবহারের নিরাপদ কৌশল (Safe Use of Funnel)
- ওয়াশ বোতল (Wash bottle)
- টেস্টটিউব ব্রাশ (Test tube brush)
- বুনসেন বার্ণার (Bunsen Burner)
- স্পিরিট ল্যম্প (Spirit lamp)
- ল্যাবরেটরি যন্ত্রপাতি ও গ্লাস সামগ্রী পরিষ্কার করার কৌশল (Cleaning Process of Laboratory Apparatus)
- ল্যাবরেটরি পরিষ্কার রাখার কৌশল (Strategies to keep the Laboratory Clean)
- টেস্টটিউব ও বিকার পরিষ্কারের কৌশল (Testtube and Beaker Cleaning Techniques)
- ব্যুরেট পরিষ্কার করার কৌশল (Burette Cleaning Techniques)
- পরিবেশের ওপর ল্যাবরেটরিতে ব্যবহৃত দ্রব্যের প্রভাব (Effect of Lab Waste on Environment)
- রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণ ও ব্যবহারের সতর্কতা (Storage of Chemicals and their Careful Use)
- পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের ওপর ল্যাবরেটরিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্যের প্রভাব
- রাসায়নিক দ্রব্যের পরিমিত ব্যবহারের গুরুত্ব (Importance of Minimum Use of Chemicals)
- আয়তনিক বিশ্লেষণ কাজে ব্যবহৃত রাসায়নিক নিক্তি বা ব্যালেন্স (Chemical Balance Used for Volumetric Analysis)
- পল-বুঙ্গী ব্যালেন্স (Paul-Bunge Balance)
- পল-বুঙ্গী ব্যালেন্সের ব্যবহার বিধি (Rules for the use of Paul-Bungi balance)
- পল-বুঙ্গী ব্যালেন্সের ব্যবহার করে বস্তুর ওজন গ্রহণ (Obtaining the weight of the object using the Paul-Bungi balance)
- মোলারিটি (Molarity)
- মোলার দ্রবণ (Molar solution)
- সেমিমোলার দ্রবণ (Semimolar solution)
- ডেসিমোলার দ্রবণ (Decimolar solution)
- প্রমাণ দ্রবণ (Standard solution)
- ডিজিটাল ব্যালেন্স (Digital Balance)
- ডিজিটাল ব্যালেন্সের ব্যবহার বিধি ও কার্যপদ্ধতি (Rules and Procedures for Using Digital Balance)
- ডিজিটাল ব্যালেন্স ব্যবহারে সুবিধা (Advantages of using digital balance)
- ডিজিটাল ব্যালেন্স ব্যবহারে সাবধানতা (Caution in using digital balance)
- পল-বুঙ্গী ব্যালেন্স এবং ডিজিটাল ব্যালেন্সের মধ্যে পার্থক্য (Difference between Paul-Bungi balance and digital balance)
- অধ্যায় \(A\)-এর উদাহরণসমুহ
- অধ্যায় \(A\) / \(Q.1\)-এর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নসমূহ
- অধ্যায় \(A\) / \(Q.2\)-এর বর্ণনামূলক প্রশ্নসমূহ
- অধ্যায় \(A\) / \(Q.3\)-এর বর্ণনামূলক প্রশ্নসমূহ
- অধ্যায় \(A\) / \(Q.4\)-এর সৃজনশীল প্রশ্নসমূহ
ল্যাবরেটরির নিরাপদ ব্যবহার
Safe Use Of Laboratory

লাভোয়াজিয়ে (২৬ আগস্ট ১৭৪৩-৮ মে ১৭৯৪)
আধুনিক রসায়নের জনক
আধুনিক রসায়নের জনক
রসায়ন হলো ল্যাবরেটরি বা পরীক্ষাগারকেন্দ্রিক বিজ্ঞান। পরীক্ষাগারে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের বৈশিষ্ট পরীক্ষা, পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা রসায়নের বিষয়বস্তুকে সঠিকভাবে জানতে পারে। ল্যাবরেটরিতে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যাদি নিয়ে কাজ করতে হয়। সব রাসায়নিক যৌগই কম-বেশি ক্ষতিকর। কোন কোন রাসায়নিক পদার্থ সত্যিকার অর্থেই বিপজ্জনক। তাই কতগুলো সতর্কতা রসায়নের শিক্ষার্থীদের জানা আবশ্যক। যেমন ল্যাবরেটরিতে নিজের ও সহপাঠীর সুরক্ষার কৌশল, গ্লাসসামগ্রী ব্যবহারবিধি, নির্ভুল পরিমাপ প্রক্রিয়া, পরিষেশের ওপর রাসায়নিক দ্রব্যের ক্ষতিকর প্রভাব এবং প্রভাব হ্রাসকরণ উপায়, রাসায়নিক দ্রব্যের পরিমিত ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং সর্বোপরি যেহেতু ল্যাবরেটরিতে আগুন নিয়ে কাজ প্রায়ই করতে হবে বা বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করতে হবেই, তাই সর্বোচ্চ সচেতনতার পাশাপাশি দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষার কৌশল জেনে রাখতে হবে।
সকল আবিষ্কারের মূলেই রয়েছে গঠনমূলক বৈজ্ঞানিক চিন্তা ও উন্নতমানের গবেষণা। ল্যাবরেটরিতে মানসম্মত, ত্রুটিমুক্ত ও নির্ভুল বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতেই সঠিক সিদ্ধান্তে উপনিত হওয়া যায়। ল্যাবরেটরিতে প্রতিটি পরীক্ষার সময় পরীক্ষাসংশ্লিষ্ট যন্ত্রের ব্যবহারবিধি সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকা আবশ্যক। রাসায়নিক দ্রব্যের সংরক্ষণ ও ব্যবহারের সর্কতামূলক ব্যবস্থা জানা থাকা প্রয়োজন। ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থের ঝুঁকি ও ঝুঁকির মাত্রা কিরূপ, উপাদান বিষাক্ত, ক্ষারক, ক্ষয়কারক, ক্যান্সার সৃষ্টিকারক, বিস্ফোরক না দাহ্য সে বিষয়ে অবশ্যই পূর্ণাঙ্গ ধারণা থাকা প্রয়োজন। ল্যবরেটিতে কোন কারণে দুর্ঘটনা ঘটলে তা প্রতিরোধ করার মত প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সামগ্রী রাখার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এসব নিরাপত্তা সামগ্রীর ব্যবহারবিধি সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান ও ব্যবহারের দক্ষতা ও কৌশল জানা প্রয়োজন।
সকল আবিষ্কারের মূলেই রয়েছে গঠনমূলক বৈজ্ঞানিক চিন্তা ও উন্নতমানের গবেষণা। ল্যাবরেটরিতে মানসম্মত, ত্রুটিমুক্ত ও নির্ভুল বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতেই সঠিক সিদ্ধান্তে উপনিত হওয়া যায়। ল্যাবরেটরিতে প্রতিটি পরীক্ষার সময় পরীক্ষাসংশ্লিষ্ট যন্ত্রের ব্যবহারবিধি সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকা আবশ্যক। রাসায়নিক দ্রব্যের সংরক্ষণ ও ব্যবহারের সর্কতামূলক ব্যবস্থা জানা থাকা প্রয়োজন। ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থের ঝুঁকি ও ঝুঁকির মাত্রা কিরূপ, উপাদান বিষাক্ত, ক্ষারক, ক্ষয়কারক, ক্যান্সার সৃষ্টিকারক, বিস্ফোরক না দাহ্য সে বিষয়ে অবশ্যই পূর্ণাঙ্গ ধারণা থাকা প্রয়োজন। ল্যবরেটিতে কোন কারণে দুর্ঘটনা ঘটলে তা প্রতিরোধ করার মত প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সামগ্রী রাখার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এসব নিরাপত্তা সামগ্রীর ব্যবহারবিধি সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান ও ব্যবহারের দক্ষতা ও কৌশল জানা প্রয়োজন।
ল্যাবরেটরি ব্যবহার বিধি
Principles of Laboratory Use
রসায়ন একটি সম্পূর্ণ পরীক্ষানির্ভর বিজ্ঞান। পরিক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বিজ্ঞানের চর্চাই আধুনিক বিজ্ঞানের রীতি। এক পদার্থের সাথে অন্য পদার্থের ক্রিয়ার মাধ্যমে কিভাবে এদের পরিবর্তন ঘটে সে বিষয়ে বৈজ্ঞানিক পর্যালোচনার জন্য রসায়ন গবেষণাগারে বিভিন্ন পরীক্ষা সম্পন্ন করার প্রয়োজন হয়। এসব পরীক্ষার ফলাফল নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনিত হতে হয়। এ বিষয়ে প্রথমেই প্রয়োজন সমস্ত ইন্দ্রিয়কে সজাগ রেখে একাগ্রতা ও সাবধানতার সাথে সকল পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে ও সঠিক নিয়মে সম্পন্ন করা। অনেক সময় একই পরীক্ষা একাধিকবারে সম্পন্ন করে সেই ফলাফল পর্যবেক্ষণ করার পর সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হয়। রসায়নের ব্যবহারিক ক্লাসে রসায়নাগারে খুব সতর্কতার সহিত ও মনযোগ সহকারে কাজ করা বাঞ্ছনীয়। অন্যথায় প্রতি মুহূর্তে নানাবিধ বিপদের সম্ভাবনা থাকে। ল্যবরেটরিতে একই সাথে অনেক সহপাঠী কাজ করে। এসময় নিজের নিরাপত্তার সাথে অন্যন্য সহপাঠীদের নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে মনে রাখা প্রয়োজন।
সর্বোপরি ল্যবরেটরিতে শিক্ষকের পরামর্শ ও নির্দেশ মতো সকল পরীক্ষার কাজ সম্পন্ন করে একাগ্রচিত্তে ও সতর্ক দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করেই সঠিক সিদ্ধান্তে উপনত হতে হয়। ল্যবরেটরিতে কাজের সাফল্য অর্জন করতে হলে প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে একাগ্রতা, সতর্কতা ও সুশৃঙ্খলতার সাথে ধারাবাহিকভাবে কাজ করার অভ্যাস করা একান্তই প্রয়োজন। কোন পরীক্ষা আরম্ভ করার পূর্বে উক্ত পরীক্ষার বিষয়বস্তু, কার্যপ্রণালী, যন্ত্রপাতির ব্যবহারবিধি ইত্যাদি বিষয়ে শ্রেণী শিক্ষক করণীয় ও প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করবেন। কি পরীক্ষা করতে হবে, কিভাবে করতে হবে, পরীক্ষা সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে কি কি অসুবিধা হতে পারে ইত্যাদি না জেনে কখনও পরীক্ষার কাজ আরম্ভ করা উচিত নয়। এছাড়া ল্যবরেটরিতে দাহ্য, বিষাক্ত, বিস্ফোরক ও বিপজ্জনক বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক দ্রব্য নিয়ে কাজ করতে হয়। অন্যমনস্ক হওয়া, গোলমাল করা, কাজ করার সময় অন্যের সাথে কথাবার্তা বলা ও অসতর্ক হওয়ার ফলেই দুর্ঘটনা ঘতে। সতর্ক ও সচেতন দৃষ্টি এবং সৃঙ্খলা ও নীরবতা ব্যবহারিক ক্লাসে একান্ত প্রয়োজন। নিচে ল্যবরেটরিতে ব্যবহৃত জরুরী কয়েকটি উপকরণ দেওয়া হলোঃ
সর্বোপরি ল্যবরেটরিতে শিক্ষকের পরামর্শ ও নির্দেশ মতো সকল পরীক্ষার কাজ সম্পন্ন করে একাগ্রচিত্তে ও সতর্ক দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করেই সঠিক সিদ্ধান্তে উপনত হতে হয়। ল্যবরেটরিতে কাজের সাফল্য অর্জন করতে হলে প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে একাগ্রতা, সতর্কতা ও সুশৃঙ্খলতার সাথে ধারাবাহিকভাবে কাজ করার অভ্যাস করা একান্তই প্রয়োজন। কোন পরীক্ষা আরম্ভ করার পূর্বে উক্ত পরীক্ষার বিষয়বস্তু, কার্যপ্রণালী, যন্ত্রপাতির ব্যবহারবিধি ইত্যাদি বিষয়ে শ্রেণী শিক্ষক করণীয় ও প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করবেন। কি পরীক্ষা করতে হবে, কিভাবে করতে হবে, পরীক্ষা সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে কি কি অসুবিধা হতে পারে ইত্যাদি না জেনে কখনও পরীক্ষার কাজ আরম্ভ করা উচিত নয়। এছাড়া ল্যবরেটরিতে দাহ্য, বিষাক্ত, বিস্ফোরক ও বিপজ্জনক বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক দ্রব্য নিয়ে কাজ করতে হয়। অন্যমনস্ক হওয়া, গোলমাল করা, কাজ করার সময় অন্যের সাথে কথাবার্তা বলা ও অসতর্ক হওয়ার ফলেই দুর্ঘটনা ঘতে। সতর্ক ও সচেতন দৃষ্টি এবং সৃঙ্খলা ও নীরবতা ব্যবহারিক ক্লাসে একান্ত প্রয়োজন। নিচে ল্যবরেটরিতে ব্যবহৃত জরুরী কয়েকটি উপকরণ দেওয়া হলোঃ
অ্যাপ্রোন
Apron

নিরাপদ গ্লাস বা গগলস
Safty Glass

মাস্ক
Mask


পরে এসব ক্ষতির মাত্রা কমানো যায়।
হ্যান্ড গ্লাভস
Hand Gloves





গাঢ় এসিড ব্যবহারের সময় এসিডের বোতলের গায়ে অসাবধানতাবশত গাঢ় এসিড লেগে থাকলে এবং তা হাতের সংস্পর্শে আসলে তখন হাতের ক্ষতি হতে পারে। এক্ষেত্রে হাতে হ্যান্ড গ্লাভস পরা থাকলে হাতের কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
ল্যাবরেটরিতে ব্যবহৃত ফিল্টার পেপার, কাচের টুকরা, ভাঙ্গা কর্ক ইত্যাদিকে ডাষ্টবিনে ফেলার ক্ষেত্রে হাতে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করা উচিত। ল্যাবরেটরিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতিকর প্রভাবের ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন প্রকার হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করতে হয়। বাজারে বিভিন্ন ধরনের হ্যান্ড গ্লাভস পাওয়া যায়।
নিওপ্রিন গ্লাভস
Neoprene Gloves

ভিনাইল গ্লাভস
Vinyl Gloves

জিটেক্স গ্লাভস
Zetex Gloves

লাটেক্স গ্লাভস
Latex Gloves

নাইট্রাইল গ্লাভস
Nitrile Gloves

প্রাকৃতিক রবার গ্লাভস
Natural Ruber Gloves

ল্যাবরেটরি ব্যবহারের সোনালি বিধি
Golden Rules of Laboratory Use
পরীক্ষাগারে নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি ও অক্ষুণ্ণ রাখতে হলে কতিপয় 'সোনালি বিধি' পালন অত্যাবশ্যক। সেগুলো হলো নিয়মানুবর্তিতা, যত্নশীলতা, অধ্যাবসায়, পরিশ্রম, সুবিবেচনা ও পরিচ্ছন্নতা।
ল্যবরেটরিতে আসার আগে বই পড়ে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কাজের স্বচ্ছ ধারণা নিয়ে ভালোভাবে প্রস্তুত হয়ে আসতে হবে।
ল্যবরেটরিতে চিৎকার করে বা জোরে জোরে কথা বলা অবশ্যই পরিহার করতে হবে, যাতে করে পরীক্ষা কাজে মনোনিবেশে ব্যাঘাত না ঘটে।
যে ডেস্কে কাজ করতে হবে, সে ডেস্কটি যাতে অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ল্যবরেটরি ত্যাগের আগে ব্যবহৃত সকল কাচসামগ্রী ধৌতকরণ সামগ্রী দিয়ে উত্তমরূপে ধুয়ে ডেস্কের উপরে সাজিয়ে রাখতে হবে।
কোন একটা পরীক্ষা কাজ সম্পন্ন করার সাথে সাথে এবং ল্যাবরেটরি ত্যাগ করার আগে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
অযথা বুনসেন বার্ণার জ্বালিয়ে রাখা যাবে না।
বইপত্র, খাতা, ব্যাগ, পানীয় বোতল ডেস্কের এক পাশে সজিয়ে রাখতে হবে।
পরীক্ষণ পদ্ধতি শতর্কতের সাথে অনুসরণ করতে হবে।
ব্যালেন্স পরিচ্ছন্ন রাখা আবশ্যক। ব্যালেন্সের প্যান আশপাশ রাসায়নিক দ্রব্য মুক্ত রাখতে হবে।
তাড়াহুড়া করে পরীক্ষা কাজ শেষ করে চলে যাওয়ার প্রবণতা পরিহার করতে হবে।
কাজ করার সময় সম্পূর্ণ মনোযোগী হতে হবে, কোন ক্রমেই অন্যমনস্ক হওয়া যাবে না।
রাসায়নিক দ্রব্যের গন্ধ ও স্বাদ নেয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ। তাই রাসায়নিক দ্রব্যের কখনো সরাসরি গন্ধ বা স্বাদ নেয়া যাবে না।
রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারের পূর্বে বোতলের লেভেল ঠিকভাবে দেখে নিশ্চিত হয়ে ব্যবহার করতে হবে। ব্যবহার শেষে ঐ রাসায়নিক দ্রব্যের বোতল যথাস্থানে রাখতে হবে।
রাসায়নিক বর্জ্য পদার্থকে ল্যবরেটরিতে রাখা ডাস্টবিনে পরিত্যাগ করতে হবে।
গাঢ় এসিডকে পানিসহকারে লঘুকরণের বেলায় বইয়ে দেয়া নির্দেশমতো সতর্কতার সাথে লঘুকরণ করতে হবে।
উত্তপ্ত গ্লাসের যন্ত্রপাতিকে ঠাণ্ডা পানিতে ডুবানো যাবে না; এতে উত্তপ্ত গ্লাসসামগ্রী ফেটে যায়।
ল্যবরেটরিতে অনেক সহপাঠী এক সাথে কাজ করতে হয়, তখন নিজের নিরাপত্তার সাথে অন্যান্য সহপাঠিদের নিরাপত্তার বিষয়ও গুরুত্বসহকারে মনে রাখা প্রয়োজন। সর্বোপরি ল্যবরেটরিতে শিক্ষকের নির্দেশ মতো পরীক্ষা কাজ শেষ করে গণনা কাজসহ সিদ্ধান্ত সম্পন্ন করতে হয়।
ল্যবরেটরিতে চিৎকার করে বা জোরে জোরে কথা বলা অবশ্যই পরিহার করতে হবে, যাতে করে পরীক্ষা কাজে মনোনিবেশে ব্যাঘাত না ঘটে।
যে ডেস্কে কাজ করতে হবে, সে ডেস্কটি যাতে অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ল্যবরেটরি ত্যাগের আগে ব্যবহৃত সকল কাচসামগ্রী ধৌতকরণ সামগ্রী দিয়ে উত্তমরূপে ধুয়ে ডেস্কের উপরে সাজিয়ে রাখতে হবে।
কোন একটা পরীক্ষা কাজ সম্পন্ন করার সাথে সাথে এবং ল্যাবরেটরি ত্যাগ করার আগে অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
অযথা বুনসেন বার্ণার জ্বালিয়ে রাখা যাবে না।
বইপত্র, খাতা, ব্যাগ, পানীয় বোতল ডেস্কের এক পাশে সজিয়ে রাখতে হবে।
পরীক্ষণ পদ্ধতি শতর্কতের সাথে অনুসরণ করতে হবে।
ব্যালেন্স পরিচ্ছন্ন রাখা আবশ্যক। ব্যালেন্সের প্যান আশপাশ রাসায়নিক দ্রব্য মুক্ত রাখতে হবে।
তাড়াহুড়া করে পরীক্ষা কাজ শেষ করে চলে যাওয়ার প্রবণতা পরিহার করতে হবে।
কাজ করার সময় সম্পূর্ণ মনোযোগী হতে হবে, কোন ক্রমেই অন্যমনস্ক হওয়া যাবে না।
রাসায়নিক দ্রব্যের গন্ধ ও স্বাদ নেয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ। তাই রাসায়নিক দ্রব্যের কখনো সরাসরি গন্ধ বা স্বাদ নেয়া যাবে না।
রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারের পূর্বে বোতলের লেভেল ঠিকভাবে দেখে নিশ্চিত হয়ে ব্যবহার করতে হবে। ব্যবহার শেষে ঐ রাসায়নিক দ্রব্যের বোতল যথাস্থানে রাখতে হবে।
রাসায়নিক বর্জ্য পদার্থকে ল্যবরেটরিতে রাখা ডাস্টবিনে পরিত্যাগ করতে হবে।
গাঢ় এসিডকে পানিসহকারে লঘুকরণের বেলায় বইয়ে দেয়া নির্দেশমতো সতর্কতার সাথে লঘুকরণ করতে হবে।
উত্তপ্ত গ্লাসের যন্ত্রপাতিকে ঠাণ্ডা পানিতে ডুবানো যাবে না; এতে উত্তপ্ত গ্লাসসামগ্রী ফেটে যায়।
ল্যবরেটরিতে অনেক সহপাঠী এক সাথে কাজ করতে হয়, তখন নিজের নিরাপত্তার সাথে অন্যান্য সহপাঠিদের নিরাপত্তার বিষয়ও গুরুত্বসহকারে মনে রাখা প্রয়োজন। সর্বোপরি ল্যবরেটরিতে শিক্ষকের নির্দেশ মতো পরীক্ষা কাজ শেষ করে গণনা কাজসহ সিদ্ধান্ত সম্পন্ন করতে হয়।
গ্লাস সামগ্রী ব্যবহারের নিরাপদ কৌশল
Safe Use of Glass Apparatus
পরীক্ষাগারে গ্লাসসামগ্রী ব্যবহার করে অধিকাংশ পরীক্ষা কাজ করতে হয়। গ্লাসসামগ্রীর মধ্যে রয়াছে গ্লাস টেস্টটিউব, বিকার, ফানেল, কনিকেল ফ্লাস্ক, মেজারিং বা পরিমাপক ফ্লাস্ক, পিপেট, ব্যুরেট, মেজারিং সিলিন্ডার, গোলতলি ফ্লাস্ক, গ্লাস রড, গ্লাস টিউব, লিবিগ শীতল ইত্যাদি। ল্যবরেটরিতে কাজের সময় এ সব গ্লাসের তৈরি যন্তপাতি আঘাতে সহজে ভেঙে যায়। ভাঙা গ্লাস ধারালো হয় এবং গায়ে লাগলে চামড়া কেটে গিয়ে রক্তপাত হতে পারে।
গ্লাসের যন্ত্রপাতি ভাঙার সম্ভাব্য ঝুঁকি বা কারণগুলোঃ
গ্লাসের যন্ত্রপাতি ভাঙার সম্ভাব্য ঝুঁকি বা কারণগুলোঃ
গ্লাসসামগ্রী ধোয়ার সময় পানির ট্যাপে বা বেসিনে আঘাত লাগা।
হোল্ডার দ্বারা গ্লাস টিউব ফিটিং কালে বেশি চাপ দেওয়া ও ব্যবহার কালে শতর্ক না থাকা।
ক্লাম্প দ্বারা স্ট্যান্ডের সাথে আটকানোর সময় অসতর্কভাবে অধিক চাপ প্রয়োগে গ্লাসসামগ্রী ভেঙে যায়।
গ্লাস যন্ত্রের বাইরের দেওয়ালে পানি থাকা অবস্থায় উত্তপ্ত করা।
ছিদ্র করা কর্ক বা রাবার স্টপারের মধ্যে গ্লাস টিউব বা থার্মোমিটার ফিট করতে বিশেষ নিতে হয়। যেমন গ্লাস টিউব ও স্টপারকে টাওল (কাপড় ) জড়িয়ে স্টপারের ছিদ্র পথে গ্লাসটিউব চেপে ঢুকাতে হবে। যদি এ সময় গ্লাস ভেঙে যায়; তবে ভাঙা গ্লাস হাত কাটবে না। যদি গ্লাসটিউব সহজে নয়া ঢোকে, তখন ছিদ্র বড় করে এবং পানি বা গ্লিসারিন দিয়ে ভিজিয়ে নিতে হবে। অসতর্কতাবসত এক্ষেত্রে হাত কেটে যেতে পারে।
গ্লাসসামগ্রী ওপর থেকে নিচে পড়ে গেলে ভেঙে যায়। তাই সতর্কতাই গ্লাসসামগ্রী নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করা সম্ভব।
হোল্ডার দ্বারা গ্লাস টিউব ফিটিং কালে বেশি চাপ দেওয়া ও ব্যবহার কালে শতর্ক না থাকা।
ক্লাম্প দ্বারা স্ট্যান্ডের সাথে আটকানোর সময় অসতর্কভাবে অধিক চাপ প্রয়োগে গ্লাসসামগ্রী ভেঙে যায়।
গ্লাস যন্ত্রের বাইরের দেওয়ালে পানি থাকা অবস্থায় উত্তপ্ত করা।
ছিদ্র করা কর্ক বা রাবার স্টপারের মধ্যে গ্লাস টিউব বা থার্মোমিটার ফিট করতে বিশেষ নিতে হয়। যেমন গ্লাস টিউব ও স্টপারকে টাওল (কাপড় ) জড়িয়ে স্টপারের ছিদ্র পথে গ্লাসটিউব চেপে ঢুকাতে হবে। যদি এ সময় গ্লাস ভেঙে যায়; তবে ভাঙা গ্লাস হাত কাটবে না। যদি গ্লাসটিউব সহজে নয়া ঢোকে, তখন ছিদ্র বড় করে এবং পানি বা গ্লিসারিন দিয়ে ভিজিয়ে নিতে হবে। অসতর্কতাবসত এক্ষেত্রে হাত কেটে যেতে পারে।
গ্লাসসামগ্রী ওপর থেকে নিচে পড়ে গেলে ভেঙে যায়। তাই সতর্কতাই গ্লাসসামগ্রী নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করা সম্ভব।
টেস্টটিউব ব্যবহারের নিরাপদ কৌশল
Safe Use of Testtube

ব্যবহারঃ টেস্টটিউবটি পাতিত পানি দ্বারা ভালোকরে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হয়। প্রয়োজনে টেস্টটিউব ব্রাশ ব্যবহার করে একে পরিষ্কার করে নিতে হয়। পরিষ্কার শেষে ইহা টেস্টটিউব স্ট্যান্ডে উপুর করে রাখা হয়। টেস্টটিউবে প্রয়োজনীয় পরীক্ষাধীন কঠিন নমুনা বা দ্রবণ নিয়ে টেস্টটিউব হোল্ডার দ্বারা ধরে তাপের প্রয়োজন হলে তাপ দেওয়া হয়। উত্তপ্ত টেস্টটিউব কখনোই ঠান্ডা পানি দ্বারা ধোয়া যাবে না। এতে ইহা ফেটে যেতে পারে। কাজ শেষে টেস্টটিউব ঠান্ডা করে টেস্টটিউব ব্রাশে লিকুইড ডিটারজেন্ট লাগিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার পুনরায় স্ট্যান্ডে সংরক্ষণ করতে হবে।
টেস্টটিউবে গাঢ় এসিড নেওয়ার সময় বাম হাতে হোল্ডার দিয়ে টেস্টটিউব ধরে ডান হাতে লম্বা কাচনলে করে এসিড নিয়ে তাতে ফেলতে হবে।
বিকার ব্যবহারের নিরাপদ কৌশল
Safe Use of Beaker

ব্যবহারঃ আয়তনিক বিশ্লেষণ ও গুণগত বিশ্লেষণ কাজে তরল পদার্থ, বিভিন্ন প্রকার দ্রবণ ও পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিকার ব্যবহৃত হয়। বিকারের সাহায্যে তরল পদার্থ ঢেলে নেয়া, ব্যুরেটে দ্রবণ স্থানান্তর করা, দ্রবণ বা তরল পদার্থকে বুনসেন বার্ণারে উত্তপ্ত করা ইত্যাদি কাজ ল্যাবরেটরিতে করা হয়।
ব্যুরেট ব্যবহারের নিরাপদ কৌশল
Safe Use of Burette

ব্যবহারঃ আয়তনিক বিশ্লেষণে টাইট্রেশন কাজে ব্যুরেট ব্যবহৃত হয়। ব্যুরেটে কোন দ্রবণ নেয়ার পূর্বে ব্যুরেটটিকে ঐ দ্রবণের কয়েক সিসি দ্বারা রিন্স (rinse) বা ধুয়ে নিতে হয়। অতঃপর ব্যুরেটের স্টপকক বন্ধ করে এর মুখে একটি ছোট ফানেলের মাধ্যমে দ্রবণ ব্যুরেটের শূন্য দাগের ওপর পর্যন্ত নিতে হয়। স্টপকক খুলে কিছু দ্রবণ ফেলে দিয়ে বায়ুর বুদ্বুদ্ মুক্ত করা হয় এবং প্রয়োজনে আরো প্রমাণ দ্রবণ ব্যুরেটে যোগ করে শুন্য দাগ পর্যন্ত দ্রবণের উপরিভাগের মিনিসকাস (meniscus) স্থির করা হয় যাতে করে অবতলের ঠিক নিচের তরলটি শূন্য দাগ বরাবর থাকে। অতঃপর দ্রবণ ভর্তি ব্যুরেটটিকে ক্ল্যাম্পের সাহায্যে একটি স্ট্যান্ডের সাথে খাড়াভাবে লাগানো হয়। বাম হাতের কনিষ্ঠা ও অনামিকা দ্বারা ব্যুরেটের টিপকে খাড়া রেখে, বৃদ্ধা আঙ্গুল, মধ্যমা ও তর্জনী দ্বারা স্টপকক ঘুরিয়ে ব্যুরেট থেকে ফোটায় ফোটায় দ্রবণ কনিকেল ফ্লাস্কে যোগ করা হয়।
সঠিক পাঠ গ্রহণঃ টাইট্রেশন শেষে 'ব্যুরেট-পাঠ' নেয়ার সময় এর ভেতরের তরলের সর্বনিম্ন মিনিসকাস (Lower meniscus), ব্যুরেটের দাগ ও চোখের দৃষ্টিরেখা একই সরলরেখায় থাকতে হয়। যদিও তরলের পৃষ্ঠটান (surface tension) এর ফলে ব্যুরেটের গায়ে তরলের উচ্চতা কিছুটা বেশি দেখায়, তবুও নির্ভুল 'ব্যুরেট-পাঠ' রূপে তরলের সর্বনিম্ন বক্রতল (Lower meniscus) পর্যন্ত পাঠ নিতে হয়। আলোর প্রতিফলন ও প্যারালাক্সবশত অনেক সময় 'মিনিসকাস' সুস্পষ্ট হয় না। এ অসুবিধা দূর করার জন্য 'ব্যুরেট রিডার' বা অ্যান্টি প্যারালাক্স কার্ড ব্যবহার করা হয়।
পিপেট ব্যবহারের নিরাপদ কৌশল
Safe Use of Pipette

ব্যবহারঃ পরীক্ষাগারে একটি নির্দিষ্ট আয়তনের প্রস্তুত দ্রবণকে এক পাত্র থেকে অন্য পাত্রে নেয়ার জন্য পিপেট ব্যবহৃত হয়। পিপেটকে বাম হাতে মাঝখানে ধরে সরু মুখবিশিষ্ট প্রান্তটিকে তরল পদার্থের পাত্রে ডুবিয়ে রেখে অপর প্রান্তটি ঠোঁটে চেপে রেখে ধীরে ধীরে শোষণ টানে বা sucking করে তরলটিকে পিপেটের গোলাকার দাগের কিছু ওপর পর্যন্ত নিতে হয়। তারপর ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির পেট দিয়ে পিপেটের ঐ প্রান্তটিকে চট করে চেপে ধরে এবং ধীরে ধীরে হালকা করে সতর্কতার সাথে বাতাস ঢুকালে তরলটি নিচে নামতে থাকে। যখন তরলটির নিচের তলটি (lower memiscus) গোলাকার দাগ পর্যন্ত আসে, তখন বৃদ্ধাঙ্গুলি চেপে রেখে পিপেটটিকে সরিয়ে অপর পাত্রে যেমন কনিকেল ফ্লাস্কে তরলটিকে নেয়া হয়। sucking কাজটা মুখ দিয়ে না করে rubber sucker বা pipette filler দিয়েও করা যায়।
সাধারণত \(10 mL\) ও \(25 mL\) আয়তনের পিপাট ব্যবহার করা হয়। পিপেটের গায়ে TD প্রতীক দ্বারা to deliver বোঝায়। কোন কোন পিপেটের নল দাগাঙ্কিত থাকে। দাগাঙ্কিত পিপেট দিয়ে যে কোন আয়তনের তরল বা প্রস্তুত দ্রবণ পরিমাপ করা যায়। তরল স্থানান্তরের সময় পিপেটে কখনো ঝাঁকুনি বা ফুঁ দিতে নেই। শুধু পিপেটের অগ্রভাগকে কনিকেল ফ্লাস্ক বা পরিমাপক ফ্লাস্কের গায়ে স্পর্শ করাই যথেষ্ট।
লিবিগ শীতক ব্যবহারের নিরাপদ কৌশল
Safe Use of Libig Condencer

ব্যবহারঃ পাতন প্রক্রিয়া সম্পাদনের ক্ষেত্রে লিবিগ শীতল অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি যন্ত্র। এর ব্যবহারে কৌশল সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকলে একে ব্যবহার করা যায় না এবং কাঙ্ক্ষিত ফলাফলও পাওয়া যায় না। লিবিগ শীতলের উপরের মুখ ককের সাহায্যে পাতন ফ্লাস্কের সাথে এবং নিচের প্রান্তে সংগ্রাহক পাত্রকে যুক্ত করে রাখা হয়। লিবিগ শীতলের নিচের আগমন পথের সাথে রাবার নল দ্বারা ট্যাপের পানিকে যুক্ত করা হয়। উপরের নির্গমন নলের সাথে অপর একটি রাবার নলকে যুক্ত করে রাবার নলের অপর প্রান্তকে ড্রেনের সাথে যুক্ত করে দিতে হয়।
রিয়েজেন্ট বোতল ব্যবহারের নিরাপদ কৌশল
Safe Use of Reagent Bottle

সংরক্ষণঃ ল্যাবরেটরিতে বিভিন্ন তাক বা সেল্ফে প্রয়োজনীয় রাসায়নিক বিকারক বা রিয়েজেন্ট এর বোতল কর্কযুক্ত অবস্থায় সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখা হয়। বিভিন্ন মোলার ঘনমাত্রার (M) রাসায়নিক বিকারকের দ্রবণ রাখার এসব বোতলের গায়ে যথাযথ নামের লেবেল লাগিয়ে সতর্কতার সাথে তাকে সাজিয়ে রাখতে হয়।
ব্যবহারঃ রিয়েজেন্ট বোতল থেকে রিয়েজেন্ট ড্রপারের সাহায্যে ব্যবহার করতে হবে। কোন রিয়েজেন্ট বোতলের দ্রবণ নিতে ড্রপার ব্যবহার করলে তখন পৃথক পৃথক রিয়েজেন্ট বোতলের জন্য পৃথক ড্রপার ব্যবহার করতে হয়। একই ড্রপার দুইটি রিয়েজেন্ট বোতলের জন্য ব্যবহার করা যাবে না। একটি রিয়েজেন্ট বোতলের ছিপি যাতে অন্য রিয়েজেন্ট বোতলে সঙ্গে পাল্টে না যায় সেটি খেয়াল রাখতে হবে।
আবার সরাসরি বিকারক দ্রবণ রিয়েজেন্ট বোতল থেকে টেস্টটিউবের দ্রবণে যোগ করার সময় গ্লাস স্টপারটির নিচের অংশ ডান হাতের অনামিকা ও মধ্যমা আঙ্গুলদ্বয়ের ফাঁকে ধরে রেখে অবশিষ্ট আঙ্গুল দ্বারা রিয়েজেন্ট বোতল ধরতে হয়। গ্লাস স্টপারটি টেবিলে রাখা উচিত নয়। এরূপে রিয়েজেন্টকে দূষণমুক্ত রাখা সম্ভব।
থার্মোমিটার ব্যবহারের নিরাপদ কৌশল
Safe Use of Thermometer

ব্যবহারঃ ল্যবরেটরিতে তাপ পরিমাপের জন্য থার্মমিটারে প্রয়োজন হয়। থার্মমিটার কাচের তৈরি বিধায় এর ভাল্বের বিপরীত প্রান্তে ছিদ্রের মধ্যে সুতা প্রবেশ করিয়ে সুতা দ্বারা বেঁধে এমনভাবে পরীক্ষাধীন দ্রবণে ঝুলাতে হবে যাতে থার্মমিটারের ভাল্ব পাত্রের তলদেশ স্পর্শ না করে। থার্মমিটারের কাচের গায়ে দাগ কাটা থাকে। ভিতরের পারদস্তম্ভের উপরিতলের দাগ থেকে তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয়।
মেজারিং সিলিন্ডার ব্যবহারের নিরাপদ কৌশল
Safe Use of Measuring Cylinder

ব্যবহারঃ সিলিন্ডারের গায়ে \(cm^{3}\) অথবা \(mL\) দাগাঙ্কিত থাকে। ফলে একটি সিলিন্ডার দ্বারা বিভিন্ন আয়তনের তরল পরিমাপ করা যায়। বিশেষত নির্দিষ্ট আয়তনের গাঢ় এসিড ও পানির পরিমাপ করার জন্য মেজারিং সিলিন্ডার ব্যবহৃত হয়। এটা সাধারণত \(5 cm^{3}, \ 10 cm^{3}, \ 50 cm^{3},\)\(100 cm^{3}, \ 200 cm^{3}, \ 250 cm^{3}\) প্রভৃতি বিভিন্ন আয়তনের হয়। আয়তন যত বেশি হয় সিলিন্ডারের আকৃতি তত মোটা হয় এবং পরিমাপের সূক্ষ্ণতা তত কমে যায়। এটি দ্বারা সর্বনিম্ন \(1 mL\) তরল মাপা যায়।
সঠিক পাঠ গ্রহণঃ মেজারিং সিলিন্ডারে সর্বনিম্ন \(1 mL\) তরল মাপা যায়। তবে তরলে পৃষ্ঠটান বা surface tension এর কারণে সিলিন্ডারের গায়ে তরলের উচ্চতা কিছুটা বেশি দেখায়। এজন্য মেজারিং সিলিন্ডার দ্বারা নির্ভুলভাবে তরল পদার্থ পরিমাপের নিয়ম হলো 'তরলের সর্বনিম্ন তল' lower meniscus এর পাঠ নেয়া। মেজারিং সিলিন্ডারসহ অন্যান্য আয়তনিক পরিমাপক যন্ত্র যেমন ব্যুরেট ও পিপেট দ্বারা তরল পরিমাপের ক্ষেত্রে তরলের lower meniscus দেখে আয়তনের পাঠ নিতে হয়।
আয়তনমিতিক ফ্লাস্ক ব্যবহারের নিরাপদ কৌশল
Safe Use of Volumetric Flask

ব্যবহারঃ পরীক্ষাগারে সাধারণত \(100 cm^{3}, \ 250 cm^{3},\)\(500 cm^{3}\) ও \(1 dm^{3}\) আয়তনের ফ্লাস্ক বেশি ব্যবহৃত হয়। নির্দিষ্ট আয়তনের প্রমাণ দ্রবণ তৈরি করার জন্য বিভিন্ন আয়তনিক ফ্লাস্ক বা মেজারিং ফ্লাস্ক ব্যবহৃত হয়। এ ফ্লাস্কের সরু গলাযুক্ত নলের মাঝামাঝি স্থানে চারিদিকে ঘিরে একটি দাগ দিয়ে ফ্লাস্কের আয়তন নির্দিষ্ট করা হয়। এ ফ্লাস্ক যেকোন ঘনমাত্রার দ্রবণ তৈরি করার জন্য ব্যবহার করা হয়। ফ্লাস্কের মুখটি গ্লাস স্টপার দ্বারা বন্ধ করা যায়। ফ্লাস্কের গায়ে TC প্রতীক দ্বারা 'to contain' বোঝায়।
কনিক্যাল ফ্লাস্ক ব্যবহারের নিরাপদ কৌশল
Safe Use of Conical Flask

ব্যবহারঃ টাইট্রেশনের পূর্বে প্রথমে কনিকেল ফ্লাস্কে পিপেটের সাহায্যে একটি নির্দিষ্ট আয়তনের জানা অথবা অজানা ঘনমাত্রার দ্রবণ নিয়ে এতে প্রয়োজনমত নির্দেশক যোগ করা হয়। এবার কনিকেল ফ্লাস্কের গলায় ডান হাতে ধরে এটিকে খাড়া ব্যুরেটের তলায় নিয়ে ব্যুরেট থেকে ওপর একটি বিক্রিয়ক দ্রবণ যোগ করে কনিকেল ফ্লাস্কের মিশ্রণকে চক্রাকারে ঘুরায়ে টাইট্রেশন করা হয়।
পৃথকীকরণ ফানেল ব্যবহারের নিরাপদ কৌশল
Safe Use of Separating Funnel

ব্যবহারঃ ভিন্ন ভিন্ন ঘনত্বের তরল উপাদানকে পৃথকীকরণ ফানেলের মুখে সাধারণ ফানেল বসিয়ে ফানেলের মধ্যে নেয়া হয়। বেশ কিছু সময় স্থির অবস্থায় রেখে দিলে ঘনত্বের মান অনুযায়ী তরল উপাদানগুলো ভিন্ন ভিন্ন স্তরে অবস্থান করে সম্পূর্ণ পৃথক স্তর সৃষ্টি করে। উচ্চ ঘনত্বের তরল সবচেয়ে নিচের স্তরে এবং সবচেয়ে নিম্ন ঘনত্বের তরল উপরের স্তরে অবস্থান করে।ফানেলের স্টককের ছিপি খুলে উচ্চ ঘনত্বের তরলকে প্রথমে এবং ক্রমান্বয়ে ঘনত্বের মান অনুযায়ী অন্যান্য তরলগুলোকে পৃথক করে নেয়া হয়। প্রতিটি তরল স্তর পৃথক করার পর ছিপি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
পৃথকীকরণ ফানেল ব্যবহারের শেষে তরল সাবান বা তরল ডিটারজেন্ট দ্বারা ধৌত করা হয়। বিশেষ ক্ষেত্রে নরম ব্রাশ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
ওজন বোতল বা ওয়িং বোতল ব্যবহারের নিরাপদ কৌশল
Safe Use of Woing Bottle

ব্যবহারঃ কঠিন রাসায়নিক দ্রব্য পরিমাপের ক্ষেত্রে পরীক্ষাগারে এটি একটি উত্তম মাধ্যম। বোতলের মুখে ঢাকনাযুক্ত অবস্থায় সবসময় একে ওজন করা হয়। ঢাকনা খুলে কঠিন রাসায়নিক দ্রব্য বোতলের মধ্যে নেয়া হয় বা অপসারণ করা হয়।
গ্যাসজার ব্যবহারের নিরাপদ কৌশল
Safe Use of Gas Jar

ব্যবহারঃ ঢাকনা দ্বারা গ্যাসজারের মুখ বন্ধ করে রাখা হয়। পানির নিম্নমুখী অপসারণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপন্ন গ্যাসকে সংগ্রহ করা হয়। যেসব গ্যাস পানিতে অদ্রবণীয় এবং পানির সাথে বিক্রিয়া করে না সেগুলিকে পানির অপসারণ প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ করা হয়। বর্ণযুক্ত গ্যাস গ্যাসজারের বাহির থেকে দেখা যায়। গ্যাসজার ব্যবহার শেষে তরল সাবান বা তরল ডিটারজেন্ট দ্বারা পরিষ্কার করে নেওয়া হয়।
ফানেল ব্যবহারের নিরাপদ কৌশল
Safe Use of Funnel

ব্যবহারঃ আয়তনিক ফ্লাস্কে ও ব্যুরেটে তরল পদার্থ নেয়ার জন্য ফানেল ব্যবহৃত হয়। সরাসরি রাসায়নিক বস্তুর ভর পরিমাপ করে প্রমাণ দ্রবণ তৈরি করার সময় ফানেল ব্যবহার করা হয়।
ওয়াশ বোতল
Wash bottle

ব্যবহারঃ আয়তনিক ফ্লাস্কে নির্দিষ্ট আয়তনের প্রমাণ দ্রবণ তৈরি করার সময় ওয়াশ বোতল থেকে পানি যোগ করে ফানেলে লেগে থাকা রাসায়নিক বস্তুকে ধুয়ে ফ্লাস্কে নেয়া হয় এবং নির্দিষ্ট দাগ পর্যন্ত পূর্ণ করা হয়।
টেস্টটিউব ব্রাশ
Test tube brush

ব্যবহারঃ টেস্ট টিউব ব্রাশ বা স্পাউট ব্রাশ যা টেস্ট টিউব এবং সরু মুখের পরীক্ষাগার কাচের জিনিসপত্র পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
যেমনঃ টেস্ট টিউব, সিলিন্ডার, বুরেটস এবং এরলেনমিয়ার ফ্লাস্ক।
বুনসেন বার্ণার
Bunsen Burner
ল্যাবরেটরিতে যেকোন রাসায়নিক দ্রব্যকে উত্তপ্ত করতে বুনসেন বার্ণার অত্যান্ত প্রয়োজনীয় একটি যন্ত্র। ১৮৫৫ সালে জার্মান বিজ্ঞানী রবার্ট বুনসেন এ বার্ণার উদ্ভাবন করেন। তার নামানুসারে এ বার্ণারের নাম হয় বুনসেন বার্ণার। এ বার্ণারের জ্বালানি হিসেবে গ্যাসীয় হাইড্রোকার্বনেট ব্যবহার করা হয়। এ দাহ্য গ্যাসগুলো বায়ুর অক্সিজেনের উপস্থিতিতে শিখাসহ জ্বলতে থাকে। বার্ণারের বায়ু নিয়ন্ত্রকের সাহয্যে শিখাকে জারণ ও বিজারণ শিখায় পরিনত করা যায়। বুনসেন বার্ণারের তিনটি অংশ। যথা-
ভূমি বা ধাতব পাদমূলঃ এটি ঢালাই লোহার তৈরি মোটা ও ভারী অংশ। এর উপর দীপনল খাড়াভাবে আটকানো থাকে। ধাতব পাদমূলের মধ্যস্থলে খুব সরু ও সূঁচালো নল থাকে। এটিকে জেট নল বলা হয়। এ জেট নলটি পাদমূলের পার্শ্বনলের সাথে যুক্ত থাকে। পার্শ্বনলটি রাবারের নল দিয়ে স্টপককযুক্ত গ্যাস সরবরাহ নলের সাথে যুক্ত থাকে। স্টপককটি খুলে দিলে পার্শ্বনলের মধ্যদিয়েই জ্বালানি গ্যাস বার্ণারের পাদমূলে প্রবেশ করে এবং সূঁচালো ছিদ্রপথ দিয়ে বেরিয়ে আসে।
ধাতব দীপনলঃ এটি সমব্যাস ও নির্দিষ্ট উচ্চতার সংকর ধাতু ব্রাসের তৈরি একটি নল। বার্ণারের পাদমূলের সূঁচালো মুখের উপর প্যাঁচের সাহায্যে এক লম্বা খাড়া ফাঁপা ধাতব নল খাড়াভাবে বসানো থাকে। বার্ণার নলের নিচের দিকে বিপরীত দিকে বায়ু প্রবেশের জন্য সোজাসুজি দুইটি গোলাকার ছিদ্র থাকে। এ ছিদ্র পথ দিয়ে বায়ু নলের ভিতরে প্রবেশ করে। পাদমূলের সূঁচালো ছিদ্রপথের সরবরাহকৃত জ্বালানি গ্যাস এবং বায়ু নিয়ন্ত্রকের মাধ্যমে প্রবিষ্ট বায়ুর অক্সিজেনের মিশ্রণে বার্ণার নলের মুখে দহন ঘটে শিখার সৃষ্টি করে।
বায়ু নিয়ন্ত্রকঃ এটি ধাতু নির্মিত দীপনলের ব্যাস অপেক্ষা সামান্য বড় ব্যাসের একটি রিং বিশেষ। এর গায়ে দুইটি ছিদ্র থাকে। এটি দীপনল ও ধাতব পাদমূলের সংযোগস্থলে দীপনলের গায়ের সাথে আটকানো থাকে। এ রিং দ্বারা দীপনলের বায়ুর প্রবেশ নিয়ন্ত্রন করা যায়। রিং ঘুরিয়ে বায়ুর প্রবেশ বন্ধ করে দিলে দীপনলের মুখে উজ্জ্বল লাল-হলুদ বর্ণের শিখা পরিলক্ষিত হয়। এ শিখাকে বিজারণ শিখা বলা হয়। বায়ু প্রবেশ পথ খোলা থাকলে দীপ্তিহীন নীলাভ শিখার উৎপন্ন হয়। এ শিখাকে জারণ শিখা বলে।
অদহন মণ্ডলঃ দীপনলের মুখে ভিতরের দিকে ঘন নীল বা কালো অংশ দেখা যায়। এ অঞ্চলের জ্বালানি গ্যাস বায়ুর সংস্পর্শে আসতে পারে না। ফলে গ্যাসের দহন ঘটে না। এ কারণেই এ অঞ্চলকে অদহন মণ্ডল বলা হয়। এ অঞ্চলের তাপমাত্রা খুবই সামান্য। ম্যাচ কাটির বারুদের অংশ প্রবেশ করালেও কোনো ধরনের প্রজ্বলন ঘটে না।
অসম্পূর্ণ দহন মণ্ডলঃ গ্যাসের আংশিক দহনের ফলে অদহন মণ্ডলকে ঘিরে অস্বচ্ছ ও হলুদ বর্ণের উজ্জ্বল অংশ উৎপন্ন হয়, এটিকে অসম্পূর্ণ দহন মণ্ডল বলা হয়। বায়ুর স্বল্পতার কারণে এখানে জ্বালানি গ্যাসের সম্পূর্ণ দহন না হয়ে আংশিক দহন ঘটে। কারণ বার্ণারের বায়ু প্রবেশ বন্ধ থাকায় এ অঞ্চলে অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে না। তাই গ্যাসীয় হাইড্রোকার্বনের কিছু অংশ তাপের প্রভাবে বিয়োজিত হয়ে সূক্ষ্ণ সূক্ষ্ণ কার্বন কণায় পরিণত হয় এবং এ কার্বন কণাগুলো শিখার তাপে ভষ্মীভূত হয়ে হলুদ বর্ণের উজ্জ্বল অঞ্চলের সৃষ্টি করে। বিজারক কার্বন কণার উপস্থিতির কারণে একে বিজারক মণ্ডলও বলা হয়।
ক্ষুদ্র সম্পূর্ণ দহন মণ্ডলঃ শিখার একেবারে নিচে অদহন মণ্ডলকে ঘিরে যে ঘাঢ় নীল বর্ণের ছোট অনুজ্জ্বল অংশ দেখা যায় তাকেই ক্ষুদ্র সম্পূর্ণ দহন মণ্ডল বলে। বায়ুর সংস্পর্শে থাকার কারণে এ অংশের জ্বালানি গ্যাসের সম্পূর্ণ দহন ঘটে। এছাড়া কিছু হাইড্রোকার্বনের আংশিক দহনের ফলে উৎপন্ন কার্বন মনোক্সাইড (CO) এর দহন ঘটে। ফলে এ অংশের শিখার বর্ণ নীল হয়।
সম্পূর্ণ দহন মণ্ডলঃ জ্বালানি গ্যাসের সম্পূর্ণ দহনের ফলে শিখার উপরিভাগে যে স্বল্প উজ্জ্বল নীলাভ অঞ্চল দেখা যায় তাকেই সম্পূর্ণ দহন মণ্ডল বলা হয়। বায়ুর সংস্পর্শে থাকার ফলে এ অংশের জ্বালানি গ্যাসের সম্পূর্ণ দহন ঘটে। এ অঞ্চলে গ্যাসীয় হাইড্রোকার্বনের তাপীয় বিজারণের ফলে উৎপন্ন কার্বন কণাগুলোর সম্পূর্ণ দহন ঘটায় শিখার উজ্জ্বলতা হ্রাস পায়। শিখার এ অঞ্চলের তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি। একে শিখার জারক অংশও বলা হয়।
বুনসেন বার্ণারের বায়ু নিয়ন্ত্রক রিংটি ঘুরিয়ে দীপনলের মধ্যে বায়ু প্রবেশের পথ আংশিক বা সম্পূর্ণ খোলা রেখে জ্বালানি গ্যাস ও বায়ুর মিশ্রণকে দীপনলের মুখে জ্বালিয়ে যে নিলাভ অনুজ্জ্বল শিখা পাওয়া যায় তাকেই অনুজ্জ্বল শিখা বলে। প্রথমে বায়ু প্রবেশ পথ বন্ধ রেখে গ্যাস প্রজ্বলিত করে উজ্জ্বল শিখা উৎপন্ন করা হয়। অতঃপর ধীরে ধীরে বায়ু প্রবেশ পথ খুলতে থাকলে উজ্জ্বল শিখার উজ্জ্বল হলুদ অংশ ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে এবং শেষে এক সময়ে অনুজ্জ্বল শিখা উৎপন্ন হয়। মূলত গ্যাসের পূর্ণ দহনের ফলে এখানে কোনো কার্বন কণার সৃষ্টি হয় না। এজন্য শিখার বর্ণ অনুজ্জ্বল হয়। বায়ু প্রবেশ পথ খোলা থাকায় গ্যাসের চাপ তুলুনামূলকভাবে কম হয়, ফলে অনুজ্জ্বল শিখা খাটো ও মোটা হয়। অনুজ্জ্বল শিখাকে তিনটি মণ্ডলে ভাগ করা হয়। যথা-
অন্ধকার মণ্ডলঃ অনুজ্জল শিখার সবচেয়ে নিচে ও দীপনলের ঠিক উপরে শুষ্ক আকৃতির অদগ্ধ গ্যাস দ্বারা গঠিত একটি অন্ধকার অঞ্চলের উপস্থিতি দেখা যায়। এ অঞ্চলের জ্বালানি গ্যাস বায়ুর সংস্পর্শে আসে না। খুব দ্রুত দীপনল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কারণে দহন তাপমাত্রায় পৌঁছাতে পারে না। যে কারণে এ অঞ্চলে গ্যাসের দহন ঘটে না। এ অঞ্চলের তাপমাত্রা এতই নিম্ন যে ম্যাচ কাটির বারুদের অংশ প্রজ্বলিত করতে পারে না।
নীলাভ আংশিক দহন মণ্ডলঃ অন্ধকার মণ্ডলের ঠিক উপরে একটি নিলাভ আংশিক দহন অঞ্চল দেখা যায়। এ অঞ্চলের গ্যাসীয় হাইড্রোকার্বনগুলোর তাপীয় বিয়োজনের ফলে সূক্ষ্ণ সূক্ষ্ণ কার্বন কণা উৎপন্ন হয়। ফলে এ অঞ্চলে বিজারণ ঘটে। এজন্য এ অঞ্চলকে কার্বন বিজারণ অঞ্চলও বলা হয়। ধাতুর অক্সাইড, সালফেট প্রভৃতিকে বিজারিত করে যথাক্রমে ধাতু বা ধাতব সালফাইডে পরিণত করার জন্য অনুজ্জ্বল শিখার এ অঞ্চলকে ব্যবহার করা হয়।
সম্পূর্ণ দহন মণ্ডলঃ অনুজ্জ্বল শিখার একেবারে বাইরের অঞ্চলটি হলো সম্পূর্ণ দহন মণ্ডল। এ অঞ্চলের জ্বালানি গ্যাস বায়ুর সংস্পর্শে আসার কারণে এখানে গ্যাসের সম্পূর্ণ দহন হয়। শিখায় এ অঞ্চলে কোনো কার্বন কণা থাকে না এবং এ অঞ্চলটি শিখার জারক অংশও হিসেবে পরিচিত। পরীক্ষাধীন কোনো নমুনাকে বিগলিত করার জন্য অথবা জারিত করার জন্য শিখার শীর্ষ অঞ্চল ব্যবহার করা হয়। অপরপক্ষে বিভিন্ন ধাতব মূলক শনাক্তকরণের জন্য শিখার মধ্যবর্তী অঞ্চলটিকে ব্যবহার করা হয়।
দীপনলের বায়ু নিয়ন্ত্রক রিংটির সাহায্যে বায়ু প্রবেশ সম্পূর্ণ বন্ধ রেখে জ্বালানি গ্যাস সরবরাহকারী স্টপককটি খুলে জ্বালানি গ্যাস সরবরাহ করে দীপনলের মুখে অগ্নি সংযোগ ঘটাতে হয়। এর ফলে দীপনলের মুখে উজ্জ্বল শিখা উৎপন্ন হয়।
বায়ু নিয়ন্ত্রক রিংটি প্রয়োজনমতো ঘুরিয়ে বায়ু ছিদ্র পথ ধীরে ধীরে খুলে দিতে হয়। ফলে অনুজ্জ্বল শিখার সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত তাপের প্রয়োজন হলে বায়ু ছিদ্র পথটি সম্পূর্ণ খুলে দিতে হয়।
বায়ু ছিদ্র পথটি হঠাৎ করে খুলে দেওয়া উচিত নয়। এতে শব্দযুক্ত শিখার সৃষ্টি হয় এবং শিখার পশ্চাৎ প্রজ্বলন ঘটার সম্ভাবনা থেকে যায়।
স্টপকক নিয়ন্ত্রন করে গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ হ্রাস-বৃদ্ধি করে শিখার আকার ও তীব্রতা হ্রাস-বৃদ্ধি করা যায়।
ল্যাবরেটরিতে বার্ণারের কাজ শেষ হয়ে গেলে গ্যাস সরবরাহের স্টপকক বন্ধ করে শিখা সম্পূর্ণভাবে নেভাতে হয়।

ধাতব দীপনলঃ এটি সমব্যাস ও নির্দিষ্ট উচ্চতার সংকর ধাতু ব্রাসের তৈরি একটি নল। বার্ণারের পাদমূলের সূঁচালো মুখের উপর প্যাঁচের সাহায্যে এক লম্বা খাড়া ফাঁপা ধাতব নল খাড়াভাবে বসানো থাকে। বার্ণার নলের নিচের দিকে বিপরীত দিকে বায়ু প্রবেশের জন্য সোজাসুজি দুইটি গোলাকার ছিদ্র থাকে। এ ছিদ্র পথ দিয়ে বায়ু নলের ভিতরে প্রবেশ করে। পাদমূলের সূঁচালো ছিদ্রপথের সরবরাহকৃত জ্বালানি গ্যাস এবং বায়ু নিয়ন্ত্রকের মাধ্যমে প্রবিষ্ট বায়ুর অক্সিজেনের মিশ্রণে বার্ণার নলের মুখে দহন ঘটে শিখার সৃষ্টি করে।
বায়ু নিয়ন্ত্রকঃ এটি ধাতু নির্মিত দীপনলের ব্যাস অপেক্ষা সামান্য বড় ব্যাসের একটি রিং বিশেষ। এর গায়ে দুইটি ছিদ্র থাকে। এটি দীপনল ও ধাতব পাদমূলের সংযোগস্থলে দীপনলের গায়ের সাথে আটকানো থাকে। এ রিং দ্বারা দীপনলের বায়ুর প্রবেশ নিয়ন্ত্রন করা যায়। রিং ঘুরিয়ে বায়ুর প্রবেশ বন্ধ করে দিলে দীপনলের মুখে উজ্জ্বল লাল-হলুদ বর্ণের শিখা পরিলক্ষিত হয়। এ শিখাকে বিজারণ শিখা বলা হয়। বায়ু প্রবেশ পথ খোলা থাকলে দীপ্তিহীন নীলাভ শিখার উৎপন্ন হয়। এ শিখাকে জারণ শিখা বলে।
বুনসেন বার্ণারের শিখা (Flame of the Bunsen burner)
জ্বালানি গ্যাসের সাথে প্রয়োজনীয় পরিমাণ বায়ু নিয়ন্ত্রকের সাহয্যে ছিদ্রদিয়ে বুনসেন বার্ণারে প্রবেশ করে। এ গ্যাস মিশ্রণে অগ্নিসংযোগ অরা হয়। ফলে গ্যাস বার্ণারের মুখে প্রজ্বলিত হয় এবং শিখার সৃষ্টি করে। বুনসেন বার্ণারে ব্যবহৃত গ্যাস বায়ুর অক্সিজেনের উপস্থিতিতে অথবা বায়ুর অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে দহন ঘটলে দুইটি ভিন্ন শিখার সৃষ্টি হয় । একটি উজ্জ্বল শিখা অপরটি অনুজ্জ্বল বা দীপ্তিহীন শিখা। বুনসেন বার্ণারের উজ্জ্বল শিখা (Luminous flame of the Bunsen burner)
বায়ু নিয়ন্ত্রক রিং দ্বারা বায়ু ছিদ্র সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিলে জ্বালানি গ্যাস দীপনলের মুখে লম্বা উজ্জ্বল শিখায় জ্বলতে থাকে এটিকে উজ্জ্বল শিখা বলে। এ অবস্থায় জ্বালানি গ্যাসের সাথে বায়ুর অক্সিজেনের সংযোগ না ঘটায় গ্যাসটির অসম্পূর্ণ দহন ঘটে। শিখাতে অদগ্ধ কার্বন কণা থাকে, যার বিজারণ ক্ষমতা আছে, তাই অসম্পূর্ণ ধনের ফলে উৎপন্ন কার্বন কণাগুলো বার্ণারের শিখায় উচ্চ তাপমাত্রায় আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠে। বায়ু ছিদ্র বন্ধ থাকায় গ্যাসের চাপ বেশি হওয়ার কারণে শিখাটি লম্বা হয়। এ শিখায় অদগ্ধ কার্বন কণার উপস্থিতির কারণে একে বিজারণ শিখাও বলা হয়। উজ্জ্বল শিখাকে চারটি মণ্ডলে ভাগ করা হয়। যথা- অদহন মণ্ডলঃ দীপনলের মুখে ভিতরের দিকে ঘন নীল বা কালো অংশ দেখা যায়। এ অঞ্চলের জ্বালানি গ্যাস বায়ুর সংস্পর্শে আসতে পারে না। ফলে গ্যাসের দহন ঘটে না। এ কারণেই এ অঞ্চলকে অদহন মণ্ডল বলা হয়। এ অঞ্চলের তাপমাত্রা খুবই সামান্য। ম্যাচ কাটির বারুদের অংশ প্রবেশ করালেও কোনো ধরনের প্রজ্বলন ঘটে না।
অসম্পূর্ণ দহন মণ্ডলঃ গ্যাসের আংশিক দহনের ফলে অদহন মণ্ডলকে ঘিরে অস্বচ্ছ ও হলুদ বর্ণের উজ্জ্বল অংশ উৎপন্ন হয়, এটিকে অসম্পূর্ণ দহন মণ্ডল বলা হয়। বায়ুর স্বল্পতার কারণে এখানে জ্বালানি গ্যাসের সম্পূর্ণ দহন না হয়ে আংশিক দহন ঘটে। কারণ বার্ণারের বায়ু প্রবেশ বন্ধ থাকায় এ অঞ্চলে অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে না। তাই গ্যাসীয় হাইড্রোকার্বনের কিছু অংশ তাপের প্রভাবে বিয়োজিত হয়ে সূক্ষ্ণ সূক্ষ্ণ কার্বন কণায় পরিণত হয় এবং এ কার্বন কণাগুলো শিখার তাপে ভষ্মীভূত হয়ে হলুদ বর্ণের উজ্জ্বল অঞ্চলের সৃষ্টি করে। বিজারক কার্বন কণার উপস্থিতির কারণে একে বিজারক মণ্ডলও বলা হয়।
ক্ষুদ্র সম্পূর্ণ দহন মণ্ডলঃ শিখার একেবারে নিচে অদহন মণ্ডলকে ঘিরে যে ঘাঢ় নীল বর্ণের ছোট অনুজ্জ্বল অংশ দেখা যায় তাকেই ক্ষুদ্র সম্পূর্ণ দহন মণ্ডল বলে। বায়ুর সংস্পর্শে থাকার কারণে এ অংশের জ্বালানি গ্যাসের সম্পূর্ণ দহন ঘটে। এছাড়া কিছু হাইড্রোকার্বনের আংশিক দহনের ফলে উৎপন্ন কার্বন মনোক্সাইড (CO) এর দহন ঘটে। ফলে এ অংশের শিখার বর্ণ নীল হয়।
সম্পূর্ণ দহন মণ্ডলঃ জ্বালানি গ্যাসের সম্পূর্ণ দহনের ফলে শিখার উপরিভাগে যে স্বল্প উজ্জ্বল নীলাভ অঞ্চল দেখা যায় তাকেই সম্পূর্ণ দহন মণ্ডল বলা হয়। বায়ুর সংস্পর্শে থাকার ফলে এ অংশের জ্বালানি গ্যাসের সম্পূর্ণ দহন ঘটে। এ অঞ্চলে গ্যাসীয় হাইড্রোকার্বনের তাপীয় বিজারণের ফলে উৎপন্ন কার্বন কণাগুলোর সম্পূর্ণ দহন ঘটায় শিখার উজ্জ্বলতা হ্রাস পায়। শিখার এ অঞ্চলের তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি। একে শিখার জারক অংশও বলা হয়।
বুনসেন বার্ণারের অনুজ্জ্বল শিখা (None-Luminous flame of the Bunsen burner)

অন্ধকার মণ্ডলঃ অনুজ্জল শিখার সবচেয়ে নিচে ও দীপনলের ঠিক উপরে শুষ্ক আকৃতির অদগ্ধ গ্যাস দ্বারা গঠিত একটি অন্ধকার অঞ্চলের উপস্থিতি দেখা যায়। এ অঞ্চলের জ্বালানি গ্যাস বায়ুর সংস্পর্শে আসে না। খুব দ্রুত দীপনল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কারণে দহন তাপমাত্রায় পৌঁছাতে পারে না। যে কারণে এ অঞ্চলে গ্যাসের দহন ঘটে না। এ অঞ্চলের তাপমাত্রা এতই নিম্ন যে ম্যাচ কাটির বারুদের অংশ প্রজ্বলিত করতে পারে না।
নীলাভ আংশিক দহন মণ্ডলঃ অন্ধকার মণ্ডলের ঠিক উপরে একটি নিলাভ আংশিক দহন অঞ্চল দেখা যায়। এ অঞ্চলের গ্যাসীয় হাইড্রোকার্বনগুলোর তাপীয় বিয়োজনের ফলে সূক্ষ্ণ সূক্ষ্ণ কার্বন কণা উৎপন্ন হয়। ফলে এ অঞ্চলে বিজারণ ঘটে। এজন্য এ অঞ্চলকে কার্বন বিজারণ অঞ্চলও বলা হয়। ধাতুর অক্সাইড, সালফেট প্রভৃতিকে বিজারিত করে যথাক্রমে ধাতু বা ধাতব সালফাইডে পরিণত করার জন্য অনুজ্জ্বল শিখার এ অঞ্চলকে ব্যবহার করা হয়।
সম্পূর্ণ দহন মণ্ডলঃ অনুজ্জ্বল শিখার একেবারে বাইরের অঞ্চলটি হলো সম্পূর্ণ দহন মণ্ডল। এ অঞ্চলের জ্বালানি গ্যাস বায়ুর সংস্পর্শে আসার কারণে এখানে গ্যাসের সম্পূর্ণ দহন হয়। শিখায় এ অঞ্চলে কোনো কার্বন কণা থাকে না এবং এ অঞ্চলটি শিখার জারক অংশও হিসেবে পরিচিত। পরীক্ষাধীন কোনো নমুনাকে বিগলিত করার জন্য অথবা জারিত করার জন্য শিখার শীর্ষ অঞ্চল ব্যবহার করা হয়। অপরপক্ষে বিভিন্ন ধাতব মূলক শনাক্তকরণের জন্য শিখার মধ্যবর্তী অঞ্চলটিকে ব্যবহার করা হয়।
বুনসেন শিখা ব্যবহারের নিয়ম ( Method of use of bunsen flame )
ল্যাবরেটরিতে বুনসেন বার্ণার ও বুনসেন শিখা ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। দীপনলের বায়ু নিয়ন্ত্রক রিংটির সাহায্যে বায়ু প্রবেশ সম্পূর্ণ বন্ধ রেখে জ্বালানি গ্যাস সরবরাহকারী স্টপককটি খুলে জ্বালানি গ্যাস সরবরাহ করে দীপনলের মুখে অগ্নি সংযোগ ঘটাতে হয়। এর ফলে দীপনলের মুখে উজ্জ্বল শিখা উৎপন্ন হয়।
বায়ু নিয়ন্ত্রক রিংটি প্রয়োজনমতো ঘুরিয়ে বায়ু ছিদ্র পথ ধীরে ধীরে খুলে দিতে হয়। ফলে অনুজ্জ্বল শিখার সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত তাপের প্রয়োজন হলে বায়ু ছিদ্র পথটি সম্পূর্ণ খুলে দিতে হয়।
বায়ু ছিদ্র পথটি হঠাৎ করে খুলে দেওয়া উচিত নয়। এতে শব্দযুক্ত শিখার সৃষ্টি হয় এবং শিখার পশ্চাৎ প্রজ্বলন ঘটার সম্ভাবনা থেকে যায়।
স্টপকক নিয়ন্ত্রন করে গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ হ্রাস-বৃদ্ধি করে শিখার আকার ও তীব্রতা হ্রাস-বৃদ্ধি করা যায়।
ল্যাবরেটরিতে বার্ণারের কাজ শেষ হয়ে গেলে গ্যাস সরবরাহের স্টপকক বন্ধ করে শিখা সম্পূর্ণভাবে নেভাতে হয়।
স্পিরিট ল্যম্প
Spirit lamp
রসায়ন ল্যাবরেটরিতে তাপ একটি অত্যান্ত প্রয়োজনীয় নিয়ামক। বুনসেন বার্ণারের সাহায্যে এর চাহিদা পূরণ করা হয়। বুনসেন বার্ণার প্রজ্বলনের জন্য গ্যাস প্রয়োজন হয়। বার্ণারে প্রাকৃতিক গ্যাস দহনের ফলে তাপ উৎপন্ন হয়। ল্যাবরেটরিতে গ্যাস সরবরাহ না থাকলে সে ক্ষেত্রে স্পিরিট ল্যাম্প ব্যবহার করে তাপের যোগান দেওয়া হয়। স্পিরিট ল্যাম্প একটি কাচ পাত্র। এ পাত্রে একটি মুখনল থাকে। এর মধ্যে প্রয়োজনমতো মেথিলেটেড স্পিরিট নেওয়া হয়। মুখনলের মাঝের ছিদ্র দিয়ে একটি সুতার সলিতা যুক্ত থাকে। সলিতায় আগুন ধরালে শিখা ও তাপের সৃষ্টি হয়। উৎপন্ন শিখা দুইটি মণ্ডলে বিভক্ত। যথা-
বহিঃস্থ জারণ মণ্ডলঃ অনুজ্জ্বল শিখার বাইরের চারপাশের অংশই বহিঃস্থ জারণ মণ্ডল। জ্বালানি গ্যাসের পূর্ণ দহনের ফলে কোনো কার্বন গুঁড়া অবশিষ্ট থাকে না বলে আলোর প্রতিফলনের প্রভাবে এই শিখা অনুজ্জ্বল হয়। তাপ দেয়ার জন্য বহিঃস্থ জারণ মণ্ডল বা অঞ্চল ব্যবহৃত হয়।
অন্তঃস্থ বিজারণ মণ্ডলঃ অনুজ্জ্বল শিখার ভিতরের অংশ নীল বর্ণের হয়। এতে অদগ্ধ গ্যাস-মিশ্রণ ও কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস থাকে। এই অন্তঃস্থ শিখাংশকে বিজারণ শিখা বলে; কারণ উক্ত অংশে কার্বনমনোক্সাইড (CO) বিজারক পদার্থ থাকে বলীই শিখা বিজারণ ক্রিয়ায় সহায়তা করে। অন্তঃস্থ বিজারণ শিখায় তাপমাত্রা কম থাকে।

অন্তঃস্থ বিজারণ মণ্ডলঃ অনুজ্জ্বল শিখার ভিতরের অংশ নীল বর্ণের হয়। এতে অদগ্ধ গ্যাস-মিশ্রণ ও কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস থাকে। এই অন্তঃস্থ শিখাংশকে বিজারণ শিখা বলে; কারণ উক্ত অংশে কার্বনমনোক্সাইড (CO) বিজারক পদার্থ থাকে বলীই শিখা বিজারণ ক্রিয়ায় সহায়তা করে। অন্তঃস্থ বিজারণ শিখায় তাপমাত্রা কম থাকে।
ল্যাবরেটরি যন্ত্রপাতি ও গ্লাস সামগ্রী পরিষ্কার করার কৌশল
Cleaning Process of Laboratory Apparatus
ল্যাবরেটরিতে গ্লাস সামগ্রী ব্যবহারের পর ঐ ব্যবহৃত গ্লাস সামগ্রীকে ধৌতকরণের জন্য নিম্নোক্ত তিনটি 'পরিষ্কারক মিশ্রণের' মধ্য থেকে যেটি সংশ্লিষ্ট গ্লাস সামগ্রীর জন্য উপযুক্ত হবে সেটিকে ব্যবহার করে গ্লাস সামগ্রী পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হয়।
\(Na_{2}CO_{3}\) দ্রবণঃ সোডিয়াম কার্বনেটের \(10\)% লঘু দ্রবণ বড় প্লাস্টিকের গামলায় নিয়ে এতে ময়লাযুক্ত গ্লাস সামগ্রী ডুবিয়ে কিছুক্ষণ রেখে শেষে ব্রাশ দিয়ে ঘষে ময়লা পরিষ্কার করে পানিতে ধুয়ে নিতে হয়।
ডিটারিএন্ট ডেকন-\(90\): রাসায়নিক ল্যাবের প্রায় সব গ্লাস সামগ্রী পরিষ্কার করার জন্য ডেকন-\(90\) অত্যান্ত কার্যকর একটি পরিষ্কারক ডিটারজেন্ট। বিভিন্ন ধরনের ময়লা যেমন- গ্রিজ, আলকাতরা জাতীয় পদার্থ, সিলিকোন তেল,পলিমারিক অবশেষ প্রভৃতিও দূর করার জন্য ডেকন-\(90\) বেশ কার্যকর ডিটারজেন্ট। ডেকন-\(90\) হলো একটি পরিবেশবান্ধব ডিটারজেন্ট, এটি পানিতে তেমন দূষণ সৃষ্টি করে না। এটি \(100\)% অণুজীব দ্বারা ভাঙ্গনযোগ্য বা biodegradeable এবং ফসফেট মুক্ত পরিষ্কারক।
ক্রোমিক এসিড মিশ্রণঃ রাসায়নিক ল্যাবের গ্লাস সামগ্রীকে পরিষ্কার করার জন্য সর্বোত্তম পরিষ্কারকরূপে ব্যবহৃত হয় 'ক্রোমিক এসিড মিশ্রণ' (K_{2}SO_{4}+Cr_{2}(SO_{4})_{3}+4H_{2}O+3[O])। গ্লাস সামগ্রীর গায়ে বিশেষত ব্যুরেটে লেগে থাকা গ্রিজ বা তৈল জাতীয় পদার্থ দূরীকরণে ক্রোমিক এসিড মিশ্রণ খুবই কার্যকর। ক্রোমিক এসিড একটি তীব্র জারক। বিক্রিয়াকালে এটি জায়মান অক্সিজেন [O] বা অক্সিজেন পরমাণু উৎপন্ন করে। তৈল জাতীয় ময়লা পদার্থকে ঐ জায়মান অক্সিজেন জারিত করে ময়লাকে দূর করে থাকে।
\(K_{2}Cr_{2}O_{7}+4H_{2}SO_{4}\rightarrow K_{2}SO_{4}+Cr_{2}(SO_{4})_{3}+4H_{2}O+3[O]\)
ক্রোমিক এসিড মিশ্রণ প্রস্তুতিঃ নিম্নোক্ত উপাদান মিশিয়ে ক্রোমিক এসিড মিশ্রণ তৈরি করা হয়ঃ
\((i) \) পটাসিয়াম ডাইক্রমেট (\(K_{2}Cr_{2}O_{7}\)): \(4.0\) g
\((ii) \) পানি (পাতিত) : \(40.0\) mL
\((iii) \) গাঢ় \(H_{2}SO_{4}\)(2M): \(40.0\) mL
ক্রোমিক এসিড প্রস্তুত প্রণালিঃ একটি \(250mL\) পাইরেক্স গ্লাস বিকারে \(4g \ K_{2}Cr_{2}O_{7}\) গুঁড়াকে \(40 mL\) পাতিত পানিতে দ্রবীভূত করা হয়। এর মধ্যে অল্প অল্প করে 2M (মোলার) ঘনমাত্রার \(40 mL \ H_{2}SO_{4}\) মিশ্রিত করা হয়। তখন তাপোৎপাদী বিক্রিয়া ঘটে, তাই মিশ্রণের তাপমাত্রা \(70^{o}C-80^{o}C\) পর্যন্ত হয়। মিশ্রণটি কক্ষ তাপমাত্রায় শীতল হলে গ্লাসের স্টপার বিশিষ্ট রিয়েজেন্ট বোতল বা বিকারক বোতলে ভর্তি করা হয়। সদ্য প্রস্তুত ক্রোমিক এসিড মিশ্রণে ক্রোমিক অ্যানহাইড্রাইড \(CrO_{3}\) এর একাধিক higher chromic acids থাকে। এক্ষেত্রে নিম্নরূপ পরিবর্তন ঘটে।
\(K_{2}Cr_{2}O_{7}+H_{2}SO_{4}\rightarrow K_{2}SO_{4}+H_{2}Cr_{2}O_{7}(\rightarrow 2CrO_{3}+H_{2}O)\)
\(CrO_{3}+H_{2}O \rightleftharpoons H_{2}CrO_{4}\) ক্রোমিক এসিড (অস্থায়ী); \(H_{2}CrO_{4}\) এর লবণ \(K_{2}CrO_{4}\) স্থায়ী বটে।
তবে জারণ-বিজারণ বিক্রিয়াকালে ডাইক্রমেট আয়ন \(\left(Cr_{2}O^{2-}_{7}\right)\) এর রিডক্স বিক্রিয়া নিম্নরূপে দেখানো হয়।
\(K_{2}Cr_{2}O_{7}+4H_{2}SO_{4}\rightarrow K_{2}SO_{4}+Cr_{2}(SO_{4})_{3}+4H_{2}O+3[O]\)
এসিড মিশ্রণটি তৈরির পর স্বচ্ছ বর্ণ থাকলেও অনেকবার ব্যবহার করার পর এটি সবুজ রং ধারণ করে। তখন এ ক্রোমিক এসিড মিশ্রণের জারণ ক্ষমতা থাকে না; তাই সবুজ রঙের [\(Cr_{2}(SO_{4})_{3}\)] তৈরি হওয়ার ফলে এ মিশ্রণ ব্যবহার করা হয় না।
ক্রোমিক এসিড মিশ্রণের ব্যবহার বিধিঃ হাতে ল্যাটেক্স গ্লাভস পরে অতি সাবধানতার সাথে ময়লাযুক্ত গ্লাস সামগ্রী যেমন পিপেট, ব্যুরেট, কনিকেল ফ্লাস্ক ইত্যাদিকে ক্রোমিক এসিড মিশ্রণ দ্বারা পূর্ণ করে প্রয়োজনমতো কয়েক ঘন্টা বা একদিন রেখে ঐ ক্রোমিক এসিড মিশ্রণকে আবার গ্লাস স্টপারযুক্ত বিকারক বোতলে ঢেলে রাখতে হয়। এর পর গ্লাস সামগ্রীকে পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করা হয়। কিছু কিছু তৈলাক্ত পদার্থ ক্রোমিক এসিড মিশ্রণ দ্বারা খুব ধীরে ধীরে জারিত হয়। সেক্ষেত্রে ময়লাযুক্ত গ্লাস সামগ্রীকে ক্রোমিক এসিড মিশ্রণে কয়েকদিন পর্যন্ত ডুবিয়ে রাখা হয়। ব্যুরেটের স্টপ-কক এর ভিতরের গ্রিজকে এরূপে পরিষ্কার করা হয়ে থাকে।
ক্রোমিক এসিড মিশ্রণ ব্যবহারে সাবধানতাঃ ক্রোমিক এসিড মিশ্রণ তৈরিতে গাঢ় \(H_{2}SO_{4}\) এসিড মিশ্রণ ডাইক্রোমেট লবণের দ্রবণে যোগ করা হয়, তখন তাপোৎপাদী বিক্রিয়া ঘটে। গাঢ় \(H_{2}SO_{4}\) এসিড পানিশোষী ও ক্ষয়কারক পদার্থ তাই ইহা ব্যবহারকালে চোখে সেফটি গ্লাস বা গগলস , হাতে ল্যাটেক্স গ্লাভস বা ভিনাইল গ্লাভস পরতে হয়। ক্রোমিক এসিড মিশ্রণ ব্যবহারকালেও একই সাবধানতা অনুসরণ করতে হয়। ক্রোমিক এসিড মিশ্রণ ব্যবহারকালে এটি যেন হাত, পা বা শরীরে না লাগে, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। যদি ঐ এসিড ত্বকে কোথাও লেগে যায়; তখন প্রচুরপানি দিয়ে ধুয়ে শেষে \(5\)% \(NaHCO_{3}\) দ্রবণ দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
গ্লাস সামগ্রী থেকে তৈল এবং গ্রিজ জাতীয় পদার্থ দূর করতে প্রয়োজনে অ্যাসিটোন (\(CH_{3}COCH_{3}\)) দ্রাবক ব্যবহার করা হয়।
ডিটারিএন্ট ডেকন-\(90\): রাসায়নিক ল্যাবের প্রায় সব গ্লাস সামগ্রী পরিষ্কার করার জন্য ডেকন-\(90\) অত্যান্ত কার্যকর একটি পরিষ্কারক ডিটারজেন্ট। বিভিন্ন ধরনের ময়লা যেমন- গ্রিজ, আলকাতরা জাতীয় পদার্থ, সিলিকোন তেল,পলিমারিক অবশেষ প্রভৃতিও দূর করার জন্য ডেকন-\(90\) বেশ কার্যকর ডিটারজেন্ট। ডেকন-\(90\) হলো একটি পরিবেশবান্ধব ডিটারজেন্ট, এটি পানিতে তেমন দূষণ সৃষ্টি করে না। এটি \(100\)% অণুজীব দ্বারা ভাঙ্গনযোগ্য বা biodegradeable এবং ফসফেট মুক্ত পরিষ্কারক।
ক্রোমিক এসিড মিশ্রণঃ রাসায়নিক ল্যাবের গ্লাস সামগ্রীকে পরিষ্কার করার জন্য সর্বোত্তম পরিষ্কারকরূপে ব্যবহৃত হয় 'ক্রোমিক এসিড মিশ্রণ' (K_{2}SO_{4}+Cr_{2}(SO_{4})_{3}+4H_{2}O+3[O])। গ্লাস সামগ্রীর গায়ে বিশেষত ব্যুরেটে লেগে থাকা গ্রিজ বা তৈল জাতীয় পদার্থ দূরীকরণে ক্রোমিক এসিড মিশ্রণ খুবই কার্যকর। ক্রোমিক এসিড একটি তীব্র জারক। বিক্রিয়াকালে এটি জায়মান অক্সিজেন [O] বা অক্সিজেন পরমাণু উৎপন্ন করে। তৈল জাতীয় ময়লা পদার্থকে ঐ জায়মান অক্সিজেন জারিত করে ময়লাকে দূর করে থাকে।
\(K_{2}Cr_{2}O_{7}+4H_{2}SO_{4}\rightarrow K_{2}SO_{4}+Cr_{2}(SO_{4})_{3}+4H_{2}O+3[O]\)
ক্রোমিক এসিড মিশ্রণ প্রস্তুতিঃ নিম্নোক্ত উপাদান মিশিয়ে ক্রোমিক এসিড মিশ্রণ তৈরি করা হয়ঃ
\((i) \) পটাসিয়াম ডাইক্রমেট (\(K_{2}Cr_{2}O_{7}\)): \(4.0\) g
\((ii) \) পানি (পাতিত) : \(40.0\) mL
\((iii) \) গাঢ় \(H_{2}SO_{4}\)(2M): \(40.0\) mL
ক্রোমিক এসিড প্রস্তুত প্রণালিঃ একটি \(250mL\) পাইরেক্স গ্লাস বিকারে \(4g \ K_{2}Cr_{2}O_{7}\) গুঁড়াকে \(40 mL\) পাতিত পানিতে দ্রবীভূত করা হয়। এর মধ্যে অল্প অল্প করে 2M (মোলার) ঘনমাত্রার \(40 mL \ H_{2}SO_{4}\) মিশ্রিত করা হয়। তখন তাপোৎপাদী বিক্রিয়া ঘটে, তাই মিশ্রণের তাপমাত্রা \(70^{o}C-80^{o}C\) পর্যন্ত হয়। মিশ্রণটি কক্ষ তাপমাত্রায় শীতল হলে গ্লাসের স্টপার বিশিষ্ট রিয়েজেন্ট বোতল বা বিকারক বোতলে ভর্তি করা হয়। সদ্য প্রস্তুত ক্রোমিক এসিড মিশ্রণে ক্রোমিক অ্যানহাইড্রাইড \(CrO_{3}\) এর একাধিক higher chromic acids থাকে। এক্ষেত্রে নিম্নরূপ পরিবর্তন ঘটে।
\(K_{2}Cr_{2}O_{7}+H_{2}SO_{4}\rightarrow K_{2}SO_{4}+H_{2}Cr_{2}O_{7}(\rightarrow 2CrO_{3}+H_{2}O)\)
\(CrO_{3}+H_{2}O \rightleftharpoons H_{2}CrO_{4}\) ক্রোমিক এসিড (অস্থায়ী); \(H_{2}CrO_{4}\) এর লবণ \(K_{2}CrO_{4}\) স্থায়ী বটে।
\(2H_{2}CrO_{4}\) | \(\rightleftharpoons\) | \(H_{2}Cr_{2}O_{7}+ H_{2}O\); |
ক্রোমিক এসিড | ডাইক্রোমিক এসিড | |
\(3H_{2}CrO_{4}\) | \(\rightleftharpoons\) | \( H_{2}Cr_{3}O_{10}+2H_{2}O\) |
ট্রাইক্রোমিক এসিড |
\(K_{2}Cr_{2}O_{7}+4H_{2}SO_{4}\rightarrow K_{2}SO_{4}+Cr_{2}(SO_{4})_{3}+4H_{2}O+3[O]\)
এসিড মিশ্রণটি তৈরির পর স্বচ্ছ বর্ণ থাকলেও অনেকবার ব্যবহার করার পর এটি সবুজ রং ধারণ করে। তখন এ ক্রোমিক এসিড মিশ্রণের জারণ ক্ষমতা থাকে না; তাই সবুজ রঙের [\(Cr_{2}(SO_{4})_{3}\)] তৈরি হওয়ার ফলে এ মিশ্রণ ব্যবহার করা হয় না।
ক্রোমিক এসিড মিশ্রণের ব্যবহার বিধিঃ হাতে ল্যাটেক্স গ্লাভস পরে অতি সাবধানতার সাথে ময়লাযুক্ত গ্লাস সামগ্রী যেমন পিপেট, ব্যুরেট, কনিকেল ফ্লাস্ক ইত্যাদিকে ক্রোমিক এসিড মিশ্রণ দ্বারা পূর্ণ করে প্রয়োজনমতো কয়েক ঘন্টা বা একদিন রেখে ঐ ক্রোমিক এসিড মিশ্রণকে আবার গ্লাস স্টপারযুক্ত বিকারক বোতলে ঢেলে রাখতে হয়। এর পর গ্লাস সামগ্রীকে পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করা হয়। কিছু কিছু তৈলাক্ত পদার্থ ক্রোমিক এসিড মিশ্রণ দ্বারা খুব ধীরে ধীরে জারিত হয়। সেক্ষেত্রে ময়লাযুক্ত গ্লাস সামগ্রীকে ক্রোমিক এসিড মিশ্রণে কয়েকদিন পর্যন্ত ডুবিয়ে রাখা হয়। ব্যুরেটের স্টপ-কক এর ভিতরের গ্রিজকে এরূপে পরিষ্কার করা হয়ে থাকে।
ক্রোমিক এসিড মিশ্রণ ব্যবহারে সাবধানতাঃ ক্রোমিক এসিড মিশ্রণ তৈরিতে গাঢ় \(H_{2}SO_{4}\) এসিড মিশ্রণ ডাইক্রোমেট লবণের দ্রবণে যোগ করা হয়, তখন তাপোৎপাদী বিক্রিয়া ঘটে। গাঢ় \(H_{2}SO_{4}\) এসিড পানিশোষী ও ক্ষয়কারক পদার্থ তাই ইহা ব্যবহারকালে চোখে সেফটি গ্লাস বা গগলস , হাতে ল্যাটেক্স গ্লাভস বা ভিনাইল গ্লাভস পরতে হয়। ক্রোমিক এসিড মিশ্রণ ব্যবহারকালেও একই সাবধানতা অনুসরণ করতে হয়। ক্রোমিক এসিড মিশ্রণ ব্যবহারকালে এটি যেন হাত, পা বা শরীরে না লাগে, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। যদি ঐ এসিড ত্বকে কোথাও লেগে যায়; তখন প্রচুরপানি দিয়ে ধুয়ে শেষে \(5\)% \(NaHCO_{3}\) দ্রবণ দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
গ্লাস সামগ্রী থেকে তৈল এবং গ্রিজ জাতীয় পদার্থ দূর করতে প্রয়োজনে অ্যাসিটোন (\(CH_{3}COCH_{3}\)) দ্রাবক ব্যবহার করা হয়।
ল্যাবরেটরি পরিষ্কার রাখার কৌশল
Strategies to keep the Laboratory Clean
স্কুল কলেজের রসায়ন ল্যাবরেটরি বা রসায়ন পরীক্ষাগারের নিজস্ব বৈশিষ্টের অবকাঠামো থাকে। এ পরীক্ষাগারের মধ্যে থাকে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক দ্রব্যাদি এবং বিভিন্ন পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট গ্লাস সামগ্রী। সাধারণত কাঠামোগতভাবে রসায়ন পরীক্ষাগারে দু'সারি দীর্ঘ টেবিল থাকে। প্রতিটি দীর্ঘ টেবিলে শিক্ষার্থীর ব্যবহারযোগ্য ডেস্ক এবং ডেস্কের ওপর রিয়েজেন্ট বোতল সাজিয়ে রাখার সেলফ যুক্ত থাকে। এছাড়া পানি সরবরাহের ওয়াটার সাপ্লাই নল ও বেসিন এবং বুনসেন বার্ণারের গ্যাস সাপ্লাই নল বিন্যস্ত থাকে। রাসায়নিক দ্রব্যাদি সংরক্ষনের জন্য পৃথক আলমারি ও সেলফ থাকে। গ্লাস সামগ্রী এবং ধাতব ও প্লাস্টিক যন্ত্রপাতিকে পৃথক আলমারিতে রাখা হয়।
ল্যবরেটরির সমস্ত দায়িত্বে ল্যবরেটরি সহকারী, ডেমনষ্ট্রেটর ও দায়িত্ব প্রাপ্ত রসায়ন বিভাগের শিক্ষক। তাদের তত্ত্বাবধানে ল্যবরেটরি সুসজ্জিত থাকে। এছাড়া প্রতিটি শিক্ষার্থীর দায়িত্ব রয়েছে নিজের ল্যবরেটরি ব্যবহারের পর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা।
ল্যবরেটরির সমস্ত দায়িত্বে ল্যবরেটরি সহকারী, ডেমনষ্ট্রেটর ও দায়িত্ব প্রাপ্ত রসায়ন বিভাগের শিক্ষক। তাদের তত্ত্বাবধানে ল্যবরেটরি সুসজ্জিত থাকে। এছাড়া প্রতিটি শিক্ষার্থীর দায়িত্ব রয়েছে নিজের ল্যবরেটরি ব্যবহারের পর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা।
তাই ল্যবরেটরি পরীষ্কার রাখার শিক্ষার্থীর কৌশলগত দায়িত্ব ও ভূমিকা হলোঃ
পানির সিংকে পরীক্ষাকালে বর্জ্যসামগ্রী যেমন- ভাঙ্গা গ্লাসটিউব, ব্যবহৃত ফিল্টার পেপার, ছেড়া কাগজ ইত্যাদি না ফেলা। এসব বর্জ্যসামগ্রী ল্যাবরেটরিতে নির্দিষ্ট স্থানে রাখা ডাস্টবিনেফেলতে হবে।
পরীক্ষাকালে ব্যবহৃত রেয়াজেন্ট বোতল ব্যবহার শেষে শেলফে যথাস্থানে রাখতে হবে; টেবিলের ওপর রাখা যাবে না।
পরীক্ষা শেষে ব্যবহৃত গ্লাসটিউব পরিষ্কার করে স্ট্যান্ডে সুকানোর জন্য রেখে টেবিলে সাজিয়ে রাখতে হবে।
যন্ত্রপাতি পরিষ্কার রাখার কৌশলঃ একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর সিলেবাস মতে পরীক্ষাকাজে বিভিন্ন গ্লাস সামগ্রী, কেমিক্যাল ব্যালেন্স, বুনসেন বার্ণার, থার্মোমিটার ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। এছাড়া কর্মমুখী রসায়নে ব্যবহৃত প্রেসার ক্যানিং যন্ত্র, বিভিন্ন প্রকার কৌটা ও ক্রিম মেসিন রয়েছে।
রসায়ন ল্যাবে কেমিক্যাল ব্যালেন্স ব্যবহৃত হয় বিশুদ্ধ রাসায়নিক পদার্থের সঠিক ওজন নেওয়ার জন্য। এটি একটি মূল্যবান যন্ত্র। শিক্ষকের নিকট থেকে ব্যবহারবিধি জেনে কেমিক্যাল ব্যালেন্স ব্যবহার করতে হয়।এর যত্ন নিতে হয় যেন ব্যালেন্সের ওপর এবং আশেপাশে কোন রাসায়নিক পদার্থ পড়ে না থাকে। কাজ শেষ করে ব্যালেন্সের প্যান টিস্যু পেপার বা ফ্লানেল কাপড় দিয়ে মুছে নিতে হবে। ওয়েট বক্সের ওয়েটগুলোকে সঠিক স্থানে রাখতে হবে। ব্যালেন্সের বক্সের দরজা বন্ধ রাখতে হবে।
গ্লাস সামগ্রী পরিষ্কার রাখার কৌশলঃ পরিষ্কার গ্লাস সামগ্রী নিয়েই পরীক্ষাকাজ শুরু করতে হয়। অপরিচ্ছন্ন, অস্বচ্ছ গ্লাস সামগ্রী নিয়ে রাসায়নিক পরীক্ষার কাজ করা যেতে পারে না। সাধারণত ট্যাপের পানিতে গ্লাস সামগ্রী ধুয়ে নিতে হয়। তবে-
তৈলাক্ত পদার্থ থকলে বিশেষত ব্যুরেটের স্টপকক পরিষ্কার করার কাজে বোতলে সংরক্ষিত ক্রোমিক এসিড মিশ্রণ (\(K_{2}Cr_{2}O_{7}\) ও গাঢ় \(H_{2}SO_{4}\) এসিড মিশ্রণ ) দিয়ে সতর্কতার সাথে ও গ্লাভস পরা হাতে পরিষ্কার করা হয়। টেস্টটিউব পরিষ্কার করার সময় বাম হাতে টেস্টটিউব নিয়ে ট্যাপের পানিতে ডান হাতে করে ব্রাশ ব্যবহার করতে হয়।
রঙিন পদার্থ যেমন লৌহ লবণ, কপার লবণ, \(KMnO_{4}, \ K_{2}Cr_{2}O_{7}\) ইত্যাদি লবণ টেস্টটিউবে ব্যবহার করে শেষে না ধুয়ে রেখে দিলে ঐ সব পদার্থ টেস্টটিউবের ভিতরের গায়ে লেগে থাকে। পরে পরিষ্কার করতে গিয়ে অনেক সময় লাগে। তাই গ্লাস সামগ্রী ব্যবহার শেষে পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করে রাখতে হয়। টেস্টটিউব পরিষ্কার করে ইহা স্ট্যান্ডে সাজিয়ে রাখা উচিত।
অ্যামোনিয়া দ্রবণ দিয়েও কাচ যন্ত্র পরিষ্কার করা হয়।
পরীক্ষাকালে ব্যবহৃত রেয়াজেন্ট বোতল ব্যবহার শেষে শেলফে যথাস্থানে রাখতে হবে; টেবিলের ওপর রাখা যাবে না।
পরীক্ষা শেষে ব্যবহৃত গ্লাসটিউব পরিষ্কার করে স্ট্যান্ডে সুকানোর জন্য রেখে টেবিলে সাজিয়ে রাখতে হবে।
যন্ত্রপাতি পরিষ্কার রাখার কৌশলঃ একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর সিলেবাস মতে পরীক্ষাকাজে বিভিন্ন গ্লাস সামগ্রী, কেমিক্যাল ব্যালেন্স, বুনসেন বার্ণার, থার্মোমিটার ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। এছাড়া কর্মমুখী রসায়নে ব্যবহৃত প্রেসার ক্যানিং যন্ত্র, বিভিন্ন প্রকার কৌটা ও ক্রিম মেসিন রয়েছে।
রসায়ন ল্যাবে কেমিক্যাল ব্যালেন্স ব্যবহৃত হয় বিশুদ্ধ রাসায়নিক পদার্থের সঠিক ওজন নেওয়ার জন্য। এটি একটি মূল্যবান যন্ত্র। শিক্ষকের নিকট থেকে ব্যবহারবিধি জেনে কেমিক্যাল ব্যালেন্স ব্যবহার করতে হয়।এর যত্ন নিতে হয় যেন ব্যালেন্সের ওপর এবং আশেপাশে কোন রাসায়নিক পদার্থ পড়ে না থাকে। কাজ শেষ করে ব্যালেন্সের প্যান টিস্যু পেপার বা ফ্লানেল কাপড় দিয়ে মুছে নিতে হবে। ওয়েট বক্সের ওয়েটগুলোকে সঠিক স্থানে রাখতে হবে। ব্যালেন্সের বক্সের দরজা বন্ধ রাখতে হবে।
গ্লাস সামগ্রী পরিষ্কার রাখার কৌশলঃ পরিষ্কার গ্লাস সামগ্রী নিয়েই পরীক্ষাকাজ শুরু করতে হয়। অপরিচ্ছন্ন, অস্বচ্ছ গ্লাস সামগ্রী নিয়ে রাসায়নিক পরীক্ষার কাজ করা যেতে পারে না। সাধারণত ট্যাপের পানিতে গ্লাস সামগ্রী ধুয়ে নিতে হয়। তবে-
তৈলাক্ত পদার্থ থকলে বিশেষত ব্যুরেটের স্টপকক পরিষ্কার করার কাজে বোতলে সংরক্ষিত ক্রোমিক এসিড মিশ্রণ (\(K_{2}Cr_{2}O_{7}\) ও গাঢ় \(H_{2}SO_{4}\) এসিড মিশ্রণ ) দিয়ে সতর্কতার সাথে ও গ্লাভস পরা হাতে পরিষ্কার করা হয়। টেস্টটিউব পরিষ্কার করার সময় বাম হাতে টেস্টটিউব নিয়ে ট্যাপের পানিতে ডান হাতে করে ব্রাশ ব্যবহার করতে হয়।
রঙিন পদার্থ যেমন লৌহ লবণ, কপার লবণ, \(KMnO_{4}, \ K_{2}Cr_{2}O_{7}\) ইত্যাদি লবণ টেস্টটিউবে ব্যবহার করে শেষে না ধুয়ে রেখে দিলে ঐ সব পদার্থ টেস্টটিউবের ভিতরের গায়ে লেগে থাকে। পরে পরিষ্কার করতে গিয়ে অনেক সময় লাগে। তাই গ্লাস সামগ্রী ব্যবহার শেষে পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করে রাখতে হয়। টেস্টটিউব পরিষ্কার করে ইহা স্ট্যান্ডে সাজিয়ে রাখা উচিত।
অ্যামোনিয়া দ্রবণ দিয়েও কাচ যন্ত্র পরিষ্কার করা হয়।
টেস্টটিউব ও বিকার পরিষ্কারের কৌশল
Testtube and Beaker Cleaning Techniques
টেস্টটিউবের মধ্যে আমরা সাধারণত কঠিন উপাদান বা দ্রবণ রেখে তাপ দেই। কঠিন উপাদানের ক্ষেত্রে টেস্টটিউবকে প্রথমে টিউব হোল্ডার দ্বারা ধরে টিউবের মধ্যে রাখা প্রয়োজনীয় উপাদানকে ধীরে ধীরে উত্তপ্ত করা হয়। টেস্টটিউবকে তাপ দেওয়ার সময় জারণ শিখার অগ্রভাগে রেখে ধীরে ধীরে তাপ দেওয়া হয়। কখনোই বিরামহীনভাবে টেস্টটিউবকে তাপ দেওয়া যাবে না। টিউবে পরীক্ষাধীন উপাদান নিয়ে পর্যায়ক্রমে তাপ দিতে হয়। পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ শেষে টেস্টটিউবকে ঠাণ্ডা করার জন্য টিউব স্ট্যান্ডে রাখা হয়।
দ্রবণের ক্ষেত্রে পরীক্ষাধীন নমুনা টিউবের মধ্যে অল্প পরিমাণে নিয়ে পূর্বের ন্যায় একইভাবে জারণ শিখায় উত্তপ্ত করা হয়। উত্তপ্ত করার সময় টিউবকে হোল্ডার দ্বারা ধরে খাড়া করে উত্তপ্ত করতে হয়। খেয়াল রাখতে হবে যেন উত্তপ্ত অবস্থায় টিউব হতে কোনো উপাদান বেশি তাপের ফলে লাফ দিয়ে বেরিয়ে না আসে। উত্তপ্ত অবস্থায় কখনোই টিউবকে ট্যাপের পানি বা কোন ঠাণ্ডা পানির সংস্পর্শে নেয়া যাবে না। ঠাণ্ডা হওয়ার পর সেটিকে ট্যাপের পানি দ্বারা ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া হয়। যদি টিউবটি অধিক ময়লাযুক্ত হয় সেক্ষেত্রে ব্রাশে ওয়াশিং পাউডার বা তরল ডিটারজেন্ট নিয়ে ভালোভাবে ব্রাশ করে উষ্ণ গরম পানিতে ভালোকরে ধুয়ে নিতে হয়।
যথাযথ ব্যবহার শেষে অনুরূপভাবে বিকারও পরিষ্কার করতে হয়।
দ্রবণের ক্ষেত্রে পরীক্ষাধীন নমুনা টিউবের মধ্যে অল্প পরিমাণে নিয়ে পূর্বের ন্যায় একইভাবে জারণ শিখায় উত্তপ্ত করা হয়। উত্তপ্ত করার সময় টিউবকে হোল্ডার দ্বারা ধরে খাড়া করে উত্তপ্ত করতে হয়। খেয়াল রাখতে হবে যেন উত্তপ্ত অবস্থায় টিউব হতে কোনো উপাদান বেশি তাপের ফলে লাফ দিয়ে বেরিয়ে না আসে। উত্তপ্ত অবস্থায় কখনোই টিউবকে ট্যাপের পানি বা কোন ঠাণ্ডা পানির সংস্পর্শে নেয়া যাবে না। ঠাণ্ডা হওয়ার পর সেটিকে ট্যাপের পানি দ্বারা ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া হয়। যদি টিউবটি অধিক ময়লাযুক্ত হয় সেক্ষেত্রে ব্রাশে ওয়াশিং পাউডার বা তরল ডিটারজেন্ট নিয়ে ভালোভাবে ব্রাশ করে উষ্ণ গরম পানিতে ভালোকরে ধুয়ে নিতে হয়।
যথাযথ ব্যবহার শেষে অনুরূপভাবে বিকারও পরিষ্কার করতে হয়।
ব্যুরেট পরিষ্কার করার কৌশল
Burette Cleaning Techniques
প্রতিবার ব্যবহারের পর ব্যুরেটকে পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হয়। তবে ব্যুরেট পরিষ্কার করার সর্বোত্তম পন্থা হলো ক্লিঞ্জিং মিক্চার বা ক্রমিক এসিড (\(K_{2}Cr_{2}O_{7}\) ও গাঢ় \(H_{2}SO_{4}\) এর মিশ্রণ ) দ্বারা ধৌতকরণ। ক্রমিক এসিড দ্বারা ধৌত করার ব্যুরেটটিকে আবার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হয়। ধোয়ার পর দেখতে হয় স্টপকক ঠিকমত ঘুরে কিনা বা এর পাশ দিয়ে লিক্ (leak) করে কনা। যদি স্টপকক ঠিকমত কাজ না করে, তবে এর উভয় পাশে সামান্য গ্রিজ লাগিয়ে নেয়া হয়; (অধিক গ্রিজ দেয়া ঠিক নয়)। গ্লাস স্টপককের ছিদ্রের ভেতর গ্রিজ ঢুকে গেলে সরু তারের সাহায্যে বের করে নিতে হয়।
পরিবেশের ওপর ল্যাবরেটরিতে ব্যবহৃত দ্রব্যের প্রভাব
Effect of Lab Waste on Environment
পরিবেশ বলতে প্রত্যেক জীবের চার পাশের সজীব ও নির্জীব উপাদানসমূহের সমাবেশকে বোঝায়। বর্জ্য রাসায়নিক দ্রব্যসমূহ পরিবেশের ওপর কম বেশি প্রতক্ষ ও পরক্ষভাবে প্রভাব সৃষ্টি করে। কেমিস্ট্রি ল্যাবরেটরিতে প্রতিদিন ব্যবহৃত কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় বিভিন্ন গুণসম্পন্ন রাসায়নিক পদার্থ বর্জ্যরূপে পরিবেশে সহজে মিশে যায়। মাত্রাতিরিক্ত এসব ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ মাটি, পানি ও বায়ুমণ্ডলের মারাত্মক দূষণ ঘটায়।
ল্যাবরেটরিতে অধিক ব্যবহৃত ও পরিবেশের ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যসমূহ হলোঃ
অজৈব এসিড যেমন- হাইড্রক্লোরিক এসিড (\(HCl\)), নাইট্রিক এসিড (\(HNO_{3}\)), সালফিউরিক এসিড (\(H_{2}SO_{4}\)) ইত্যাদি।
অজৈব ক্ষার যেমন- কস্টিক সোডা (\(NaOH\)), কস্টিক পটাস (\(KOH\)), লিকার অ্যামোনিয়া (35%-40% \(NH_{3}\)), সোডিয়াম কার্বোনেট (\(Na_{2}CO_{3}\)) ইত্যাদি।
ধাতব লবণসমূহ যেমন- লেড (\(Pb\)), মারকারি (\(Hg\)), সিলভার (\(Ag\)), অ্যান্টিমনি (\(Sb\)), টিন (\(Sn\)), আয়রন (\(Fe\)), অ্যালুমিনিয়াম (\(Al\)), ক্রোমিয়াম (\(Cr\)), জিংক (\(Zn\)), কোবাল্ট (\(Co\)), নিকেল (\(Ni\)), ম্যাঙ্গানিজ (\(Mn\)), ক্যালসিয়াম (\(Ca\)), বেরিয়াম (\(Ba\)), স্ট্রনসিয়াম(\(Sr\)), সোডিয়াম (\(Na\)), পটাসিয়াম(\(K\)), ম্যাগনেসিয়াম (\(Mg\)) ইত্যাদি ধাতুর বিভিন্ন হ্যালাইড, নাইট্রেট, সালফেট, কার্বোনেট ও ফসফেট লবণ।
জৈব দ্রাবক ও বিকারক যেমন- মিথানল, ইথানল, অ্যাসিটোন, ক্লোরোফরম, ক্লোরোবেনজিন, টলুইন, জাইলিন, অ্যানিলিন ইত্যাদি।
ল্যাবরেটরিতে ব্যবহৃত অতিরিক্ত এসিড (\(HCl\) বা \(HNO_{3}\) বা \(H_{2}SO_{4}\)) অথবা অতিরিক্ত ক্ষার (\(NaOH\) বা \(KOH\)) বর্জ্যরূপে ড্রেনের পানির সঙ্গে নিকটস্ত বিভিন্ন জলাশয়ে ও মাটিতে মিশে যায়। তখন ঐ পানি বা মাটির অম্লত্ব বা ক্ষারকত্বের অর্থাৎ \(pH\) মানের মারাত্মক হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে। মাটির অনুকূল \(pH \ 7.0-8.0\) থেকে খুব বেশি হ্রাস বা বৃদ্ধি ঘটলে মাটির অণুজীব ধ্বংস এবং উর্বরতা নষ্ট হয়। জলাশয়ে পানির \(pH\) এর মান \(3\) এর নিচে হলে জলজ উদ্ভিদ ও মাছ মারা যায়।
ভারী ধাতুর আয়ন যেমন- \(Pb^{2+}, \ Hg^{2+}, \ Cd^{2+}, \ Cr^{2+}\) দ্বারা দূষিত পানি থেকে এসব আয়ন মাছের দেহে এবং দূষিত মাটি থেকে উদ্ভিদ দেহে শোষিত হয়। পরে খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে এসব ভারী ধাতুর আয়ন মানবদেহের চর্বিতে শোষিত হয়ে স্নায়ুতন্ত্র, কিডনি ও প্রজননতন্ত্রে বিভিন্ন মারাত্মক রোগ বা ক্যান্সার সৃষ্টি করে।
অনেক উদায়ী জৈব যৌগের বাষ্প বায়ুতে মিশে যায়। এছাড়া রসায়ন পরীক্ষাগারে বিভিন্ন বিক্রিয়ায় উৎপন্ন গ্যাসসমূহ যেমন- \(CO_{2},\) \(NO_{2},\) \(SO_{2}\) ও \(HCl(g)\) ইত্যাদি অম্লধর্মী গ্যাস বায়ুতে মিশে বায়ুদূষণ ঘটায়। বায়ুদূষণের ফলে শ্বাসযন্ত্রে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে।
অজৈব ক্ষার যেমন- কস্টিক সোডা (\(NaOH\)), কস্টিক পটাস (\(KOH\)), লিকার অ্যামোনিয়া (35%-40% \(NH_{3}\)), সোডিয়াম কার্বোনেট (\(Na_{2}CO_{3}\)) ইত্যাদি।
ধাতব লবণসমূহ যেমন- লেড (\(Pb\)), মারকারি (\(Hg\)), সিলভার (\(Ag\)), অ্যান্টিমনি (\(Sb\)), টিন (\(Sn\)), আয়রন (\(Fe\)), অ্যালুমিনিয়াম (\(Al\)), ক্রোমিয়াম (\(Cr\)), জিংক (\(Zn\)), কোবাল্ট (\(Co\)), নিকেল (\(Ni\)), ম্যাঙ্গানিজ (\(Mn\)), ক্যালসিয়াম (\(Ca\)), বেরিয়াম (\(Ba\)), স্ট্রনসিয়াম(\(Sr\)), সোডিয়াম (\(Na\)), পটাসিয়াম(\(K\)), ম্যাগনেসিয়াম (\(Mg\)) ইত্যাদি ধাতুর বিভিন্ন হ্যালাইড, নাইট্রেট, সালফেট, কার্বোনেট ও ফসফেট লবণ।
জৈব দ্রাবক ও বিকারক যেমন- মিথানল, ইথানল, অ্যাসিটোন, ক্লোরোফরম, ক্লোরোবেনজিন, টলুইন, জাইলিন, অ্যানিলিন ইত্যাদি।
ল্যাবরেটরিতে ব্যবহৃত অতিরিক্ত এসিড (\(HCl\) বা \(HNO_{3}\) বা \(H_{2}SO_{4}\)) অথবা অতিরিক্ত ক্ষার (\(NaOH\) বা \(KOH\)) বর্জ্যরূপে ড্রেনের পানির সঙ্গে নিকটস্ত বিভিন্ন জলাশয়ে ও মাটিতে মিশে যায়। তখন ঐ পানি বা মাটির অম্লত্ব বা ক্ষারকত্বের অর্থাৎ \(pH\) মানের মারাত্মক হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে। মাটির অনুকূল \(pH \ 7.0-8.0\) থেকে খুব বেশি হ্রাস বা বৃদ্ধি ঘটলে মাটির অণুজীব ধ্বংস এবং উর্বরতা নষ্ট হয়। জলাশয়ে পানির \(pH\) এর মান \(3\) এর নিচে হলে জলজ উদ্ভিদ ও মাছ মারা যায়।
ভারী ধাতুর আয়ন যেমন- \(Pb^{2+}, \ Hg^{2+}, \ Cd^{2+}, \ Cr^{2+}\) দ্বারা দূষিত পানি থেকে এসব আয়ন মাছের দেহে এবং দূষিত মাটি থেকে উদ্ভিদ দেহে শোষিত হয়। পরে খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে এসব ভারী ধাতুর আয়ন মানবদেহের চর্বিতে শোষিত হয়ে স্নায়ুতন্ত্র, কিডনি ও প্রজননতন্ত্রে বিভিন্ন মারাত্মক রোগ বা ক্যান্সার সৃষ্টি করে।
অনেক উদায়ী জৈব যৌগের বাষ্প বায়ুতে মিশে যায়। এছাড়া রসায়ন পরীক্ষাগারে বিভিন্ন বিক্রিয়ায় উৎপন্ন গ্যাসসমূহ যেমন- \(CO_{2},\) \(NO_{2},\) \(SO_{2}\) ও \(HCl(g)\) ইত্যাদি অম্লধর্মী গ্যাস বায়ুতে মিশে বায়ুদূষণ ঘটায়। বায়ুদূষণের ফলে শ্বাসযন্ত্রে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে।
রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণ ও ব্যবহারের সতর্কতা
Storage of Chemicals and their Careful Use
হ্যাজার্ড প্রতীক বা সিম্বলঃ বিপজ্জনক রাসায়নক দ্রব্যের বিপদ ঝুঁকি সম্বন্ধে সতর্ক করার জন্য ঐ সব রাসায়নিক পদার্থের প্যাকেটের ওপর যেসব সুনির্দিষ্ট সতর্কীকরণ প্রতীক ব্যবহার করা হয় তাদেরকে রাসায়নিক দ্রব্যের হ্যাজার্ড প্রতীক বা সিম্বল বলে। রাসায়নিক পদার্থের হ্যাজার্ড সিম্বল মোট ১০ টি যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।
রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ যেমন- BDH (British Drug House), E. Merck, Aldrich তাদের রাসায়নিক দ্রব্যের বোতলের লেবেলে এ সব সতর্কীকরণ প্রতীক সরবরাহ করে থাকে।
রাসায়নক পদার্থ ছাড়াও বিপজ্জনক কিছু হ্যাজার্ড সিম্বল আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আছে; যেমন- তেজস্ক্রিয় রশ্মির জন্য ও স্বাস্থ্য ঝুঁকির সংকেত।
সারাবিশ্বে ল্যাবরেটরিতে, শিল্প কারখানায়, কৃষি, চিকিৎসা প্রভৃতি ক্ষেত্রে রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার ও রাসায়নিক দ্রব্যের বাণিজ্য বেড়ে যাওয়ায় এদের সংরক্ষণ ও ব্যবহারের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী হয়ে পড়ে। এ সংক্রান্ত একটি সার্বজনীন নিয়ম Globally Harmonised System (GHS) চালুর বিষয়ে ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে জাতিসংঘের উদ্যোগে পরিবেশ ও উন্নয়ন নামে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল "One chemical one label-world wide"
রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ যেমন- BDH (British Drug House), E. Merck, Aldrich তাদের রাসায়নিক দ্রব্যের বোতলের লেবেলে এ সব সতর্কীকরণ প্রতীক সরবরাহ করে থাকে।
রাসায়নক পদার্থ ছাড়াও বিপজ্জনক কিছু হ্যাজার্ড সিম্বল আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আছে; যেমন- তেজস্ক্রিয় রশ্মির জন্য ও স্বাস্থ্য ঝুঁকির সংকেত।
সারাবিশ্বে ল্যাবরেটরিতে, শিল্প কারখানায়, কৃষি, চিকিৎসা প্রভৃতি ক্ষেত্রে রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার ও রাসায়নিক দ্রব্যের বাণিজ্য বেড়ে যাওয়ায় এদের সংরক্ষণ ও ব্যবহারের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী হয়ে পড়ে। এ সংক্রান্ত একটি সার্বজনীন নিয়ম Globally Harmonised System (GHS) চালুর বিষয়ে ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে জাতিসংঘের উদ্যোগে পরিবেশ ও উন্নয়ন নামে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল "One chemical one label-world wide"
এর প্রতিপাদ্য বিষয়সমূহ ছিল-
রাসায়নিক পদার্থকে ঝুঁকি ও ঝুঁকির মাত্রার ভিত্তিতে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ কর।
ঝুঁকির সতর্কতা সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত তৈরি করা।
ঝুঁকি ও ঝুঁকির মাত্রা বুঝানোর জন্য সার্বজনীন সাংকেতিক চিহ্ন বা সিম্বল নির্ধারণ করা।
২০০২ খ্রিষ্টাব্দে UN World Summit-এ পূর্বের BDH নিয়ম ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে পৃথিবীব্যাপি কার্যকরী করার জন্য সব্দেশ সম্মত হয়। কোনো রাসায়নিক দ্রব্য সরবরাহ ও সংরক্ষণ করতে হলে তার গায়ে লেবেলের সাহায্যে শ্রেণিভেদ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সাংকেতিক সিম্বল দেয়া আবশ্যক। এতে কার্যকারিতার ঝুঁকি মাথায় রেখে সংরক্ষণ ও ব্যবহার করতে পারবে। রাসায়নিক বস্তুর ঝুঁকি অনুসারে, ঝুঁকি নির্দেশক সঠিক Hazard Symbol Labelling এবং ঝুঁকির মাত্রা অনুসারে সংরক্ষণে তিন নিয়মের সমন্বয়কে CLP regulation বলা হয়।
নিচের সারণি মতে বিপজ্জনক সিম্বলযুক্ত কোনো রাসায়নিক পদার্থ দেখে বোঝা যাবে যে, ঐ রাসায়নিক পদার্থ একটি বিষাক্ত পদার্থ। তখন ব্যবহারকারী অত্যন্ত সতর্ক হয়ে উঠবে। এছাড়া ব্যবহারের পর বর্জ্য উন্মুক্ত পরিবেশে ফেলে দেয়া যাবে কীনা বা পরিশোধন প্রয়োজন হবে কীনা সে সম্পর্কে ধারণা নিতে পারবে। সংগৃহীত রাসায়নিক দ্রব্য কোথায়, কীভাবে সংরক্ষণ করলে রাসায়নিক দ্রব্যের মান ঠিক থাকবে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়ানো যাবে, সে সব ধারণাও এতে পাওয়া যাবে। ঝুঁকির সতর্কতা সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত তৈরি করা।
ঝুঁকি ও ঝুঁকির মাত্রা বুঝানোর জন্য সার্বজনীন সাংকেতিক চিহ্ন বা সিম্বল নির্ধারণ করা।
২০০২ খ্রিষ্টাব্দে UN World Summit-এ পূর্বের BDH নিয়ম ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে পৃথিবীব্যাপি কার্যকরী করার জন্য সব্দেশ সম্মত হয়। কোনো রাসায়নিক দ্রব্য সরবরাহ ও সংরক্ষণ করতে হলে তার গায়ে লেবেলের সাহায্যে শ্রেণিভেদ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সাংকেতিক সিম্বল দেয়া আবশ্যক। এতে কার্যকারিতার ঝুঁকি মাথায় রেখে সংরক্ষণ ও ব্যবহার করতে পারবে। রাসায়নিক বস্তুর ঝুঁকি অনুসারে, ঝুঁকি নির্দেশক সঠিক Hazard Symbol Labelling এবং ঝুঁকির মাত্রা অনুসারে সংরক্ষণে তিন নিয়মের সমন্বয়কে CLP regulation বলা হয়।
রাসায়নিক পদার্থের ঝুঁকি ও ঝুঁকির মাত্রা বোঝার জন্য নির্ধারিত সিম্বল, ঝুঁকি, ঝুঁকির মাত্রা ও সাবধানতা নিচের সারণিতে দেখানো হলো-
রাসায়নিক দ্রব্যের হ্যাজার্ড সিম্বল | ঝুঁকি, ঝুঁকির মাত্রা, সাবধানতা ও সংরক্ষণ |
১। প্রতীকঃ \(T\)![]() Toxic বিষাক্ত |
বিষাক্ত পদার্থঃ ক্যাডমিয়াম ও ক্রোমিয়াম (VI) লবণ, \(BaCl_{2}, \ NaH, \ LiAlH_{4}\)। নিঃশ্বাসে, ত্বকে লাগলে অথবা খেলে মৃত্যু হতে পারে। সংরক্ষণঃ এ ধরনের পদার্থ তালাবদ্ধ স্থানে সংরক্ষণ করা বাঞ্ছনীয়। সাবধানতাঃ ব্যবহারের সময় হাতে গ্লাভস, চোখে নিরাপদ চশমা ও নাকে মুখে মাস্ক ব্যবহার করা প্রয়োজন। পরীক্ষার পর পরীক্ষণ মিশ্রণের যথাযথ পরিশোধন করা দরকার। প্রতীক হলো \(T\)। |
২। প্রতীকঃ \(T+\)![]() Very Toxic অত্যন্ত বিষাক্ত |
মারাত্মক বিষাক্ত পদার্থঃ এ শ্রেণির পদার্থের মধ্যে মারকারি লবণসমূহ, \(HCN\) ও সায়নাইড যৌগসমূহ এবং নিকোটিন অন্তর্ভুক্ত। নিঃশ্বাসে, ত্বকের মাধ্যমে শোষিত হলে, গলাধঃকরণ করলে মৃত্যু ঘটতে পারে। এ শ্রেণির পদার্থের সংস্পর্শে ক্যান্সারসহ প্রজনন ক্ষমতা ধ্বংস হয়। সংরক্ষণঃ এ ধরনের পদার্থ তালাবদ্ধ স্থানে সংরক্ষণ করা উচিত। সাবধানতাঃ ব্যবহারের সময় হাতে গ্লাভস, চোখে নিরাপদ চশমা ও নাকে মুখে মাস্ক ব্যবহার করা প্রয়োজন। শরীরে ত্বকের মাধ্যমে প্রবেশ করতে পারে তাই এ সব পদার্থ এড়িয়ে চলতে হয়। পরীক্ষার কাজ শেষ করে হাত যথাযথ পরিষ্কার করা। প্রতীক হলো \(T+\)। |
৩। প্রতীকঃ \(Xn\)![]() Harmful ক্ষতিকারক |
ক্ষতিকারক পদার্থঃ যেমন- ব্লিচিং পাউডার, Paints, Floor polishes জাতীয় পদার্থ যে গুলো জৈব দ্রাবক, পেট্রোলে এ দ্রবীভূত । এছাড়া অ্যান্টিফ্রিজ ও পোকামাকড় মারার ওষুধ শ্বাসপ্রশ্বাসে দীর্ঘসময় যাবৎ দ্রহণ করলে, অথবা গিলে ফেললে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। সংরক্ষণঃ এ ধরনের পদার্থ তালাবদ্ধ স্থানে সংরক্ষণ করা উচিত। সাবধানতাঃ এসব রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের সময় হাতে গ্লাভস, নাকে মুখে মাস্ক ব্যবহার করা প্রয়োজন। প্রতীক হলো \(Xn\)। ( এক্ষেত্রে 'n' দ্বারা Noxious অর্থাৎ ক্ষতিকারক বোঝায় ) |
৪। প্রতীকঃ \(Xi\)![]() Irritant উত্তেজক |
উত্তেজক পদার্থঃ যেমন- বরঞ্জক পদার্থ, সোপ পাউডার, সিমেন্ট গুঁড়া, লঘু এসিড ও ক্ষার দ্রবণ। ত্বকের সংস্পর্শে এসব পদার্থের ঘনমাত্রা, সংস্পর্শের স্থায়িত্ব মতে ক্ষতির মাত্রা কম বেশি হয়। ত্বক, চোখ ও শ্বাসতন্ত্রে এরা ক্ষতি করে। সংরক্ষণঃ এ ধরনের পদার্থ তালাবদ্ধ স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে। সাবধানতাঃ ব্যবহারের সময় হাতে গ্লাভস, চোখে নিরাপদ চশমা ও নাকে মুখে মাস্ক ব্যবহার্য। এদের প্রতীক হলো \(Xi\)। ( এক্ষেত্রে 'i' দ্বারা Irritant অর্থাৎ উত্তেজক বোঝায় ) |
৫। প্রতীকঃ \(F\)![]() Flammable দাহ্য পদার্থ |
দাহ্য পদার্থঃ যেমন- \(Na, \ MaH, \ LiAlH_{4}, \ Zn\)-পাউডার, অ্যারোসল, পেট্রোলিয়াম ইত্যাদি। এদের সহজেই আগুন ধরে যায়। পানিসহ বিক্রিয়ায় তাপ উৎপন্ন করে। সংরক্ষণঃ এ ধরনের পদার্থ আগুন বা তাপ থেকে দূরে, এবং ঘর্ষণ মূক্ত রাখতে হয়। \(Na\) কে কেরসিনে; \(MaH, \ LiAlH_{4}\) কে 'inert gas' পরিবেশে সংরক্ষণ করতে হয়। সাবধানতাঃ ব্যবহারের সময় হাতে গ্লাভস, চোখে নিরাপদ চশমা ও নাকে মুখে মাস্ক ব্যবহার করা প্রয়োজন। প্রতীক হলো \(F\)। |
৬। প্রতীকঃ \(F+\)![]() Extremely Flammable মারারমক দাহ্য পদার্থ |
মারাত্মক দাহ্য পদার্থঃ যেমন- ডাই ইয়থাইল ইথার, \(LPG, \ CNG\) আসিটিলিন গ্যাস ও অ্যারোসল মিশ্রণ ইত্যাদি নিম্ন তাপমাত্রায় ও কক্ষ তাপমাত্রায় প্রজ্বলন সান্নিধ্যে সহজে শিখাসহ জ্বলে উঠে। সংরক্ষণঃ এ ধরনের পদার্থকে অগ্নি স্ফুলিঙ্গের পরিবেশ থেকে অনেক দূরে রাখতে হয়। সাবধানতাঃ ব্যবহারের সময় হাতে গ্লাভস, চোখে নিরাপদ চশমা ও নাকে মুখে মাস্ক ব্যবহার করা প্রয়োজন। প্রতীক হলো \(F+\)। |
৭। প্রতীকঃ \(E\)![]() Explosive বিস্ফোরক |
বিস্ফোরকঃ এ শ্রেণির পদার্থ অস্থিত, নিজে নিজেই বিক্রিয়া করতে পারে। যেমন- জৈব পার-অক্সাইড; \(NH_{4}NO_{3}, \ TNT, \ metal \ azides,\) গান পাউডার। সংরক্ষণঃ এ ধরনের পদার্থ নির্জনে ও শুস্ক জায়গায় সংরক্ষণ, সাবধানে নাড়াচাড়া, ঘর্ষণ হতে পারে এমন অবস্থা এড়িয়ে রাখা উচিত। সাবধানতাঃ অন্য কোনো পদার্থের সাথে মিশ্রণের সময় অতি ধিরে ধিরে যুক্ত করা, ব্যবহারের সময় হাতে গ্লাভস, চোখে নিরাপদ চশমা ও নাকে মুখে মাস্ক ব্যবহার করা প্রয়োজন। প্রতীক হলো \(E\)। |
৮। প্রতীকঃ \(N\)![]() Invironmentally Toxic পরিবেশ দূষক |
পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পদার্থঃ এ শ্রেণির পদার্থ হলো \(NH_{3}\) গ্যাস, \(Cl_{2}\) গ্যাস, তারপিন তেল ও বিভিন্ন কীটনাশক, Lindane । এরা প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর। সংরক্ষণঃ গ্যাস সিলিন্ডার আলাদা রাখতে হবে। এ ধরনের পদার্থ নদী-নালার পানিতে মিশতে দেয়া উচিত নয়। সাবধানতাঃ ব্যবহারের সময় হাতে গ্লাভস, চোখে নিরাপদ চশমা ও নাকে মুখে মাস্ক ব্যবহার করা প্রয়োজন। হ্যাজার্ড সিম্বলটিতে মরা মাছ ও মরা গাছ রয়েছে। প্রতীক হলো \(N\)। |
৯। প্রতীকঃ \(O\)![]() Oxidizing জারক |
রাসায়নিক জারক পদার্থঃ যেমন- ক্লোরিন গ্যাস; এটি নিঃশ্বাসে গেলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। কঠিন \(\) গুঁড়া, ক্ষয়কারক পদার্থ ত্বকের ক্ষয় করে, পেটে গেলে ডায়রিয়া হয়। সংরক্ষণঃ গ্যাস হলে নিচ্ছিদ্রভাবে রাখা; জারণ বিক্রিয়া করতে পারে এমন পাত্রে রাখা উচিত নয়। সাবধানতাঃ ব্যবহারের সময় হাতে গ্লাভস, চোখে নিরাপদ চশমা ও নাকে মুখে মাস্ক ব্যবহার করা প্রয়োজন। সিম্বলটিতে বৃত্তের ওপর আগুনের শিখা। প্রতীক হলো \(O\)। |
১০। প্রতীকঃ \(C\)![]() Corrosive ক্ষয়কারী |
ক্ষয়কারক পদার্থঃ যেমন- ব্লিচিং সল্যুশন, গাঢ় এসিড \(HCl, \ HNO_{3}, \ H_{2}SO_{4}\) ও ক্ষার দ্রবণ \(NaOH, \ KOH, \ NH_{4}OH,\) ড্রেইন ক্লিনার। এসব পদার্থ ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি ও Severe burn ঘটায়। রাসায়নিক পদার্থের গাঢ়তার ওপর ক্ষতির প্রকৃতি নির্ভর করে। চোখ ও ত্বক নষ্ট হয়। সংরক্ষণঃ এসিড, ক্ষার ও অন্যান্য পদার্থ আলাদাভাবে রাখতে হয়। সাবধানতাঃ ব্যবহারের সময় হাতে গ্লাভস, চোখে নিরাপদ চশমা ও নাকে মুখে মাস্ক ব্যবহার করা প্রয়োজন। প্রতীক হলো \(C\)। |
১১। ![]() Trefoil তেজস্ক্রিয় রশ্মি চিহ্ন |
তেজস্ক্রিয় পদার্থঃ আন্তর্জাতিক তেজস্ক্রিয় রশ্মি চিহ্নটিকে ট্রিফয়েলও বলা হয়। এটি দ্বারা অতিরিক্ত ক্ষতিকর আলোক রশ্মিকে বোঝানো হয়। এ তেজস্ক্রিয় রশ্মি মানবদেহকে বিকলাঙ্গ করে দিতে পারে এবং শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। সংরক্ষণঃ রশ্মি বের হতে না পারে এ ধরনের পুর বা বিশেষ পাত্রে এসব রাসায়নিক দ্রব্যাদি সংরক্ষণ করা উচিত। সাবধানতাঃ ব্যবহারের সময় হাতে গ্লাভস, চোখে নিরাপদ চশমা ও উপযুক্ত পোশাক পরিধান করা বাঞ্ছনীয়। |
১২। ![]() স্বাস্থ্য-ঝুঁকির সংকেত |
স্বাস্থ্য-ঝুঁকিমূলক পদার্থঃ এ শ্রেণির পদার্থ দেহের শ্বাসপ্রশ্বাস সংক্রান্ত তন্ত্রের জন্য সংবেদনশীল, জীবাণু সংক্রমণ ঘটাতে পারে, ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। সংরক্ষণঃ এ ধরনের পদার্থ সর্বসাধারণের চলাচলের বাইরে নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ করা উচিত। সাবধানতাঃ ব্যবহারের সময় হাতে গ্লাভস, চোখে নিরাপদ চশমা ও নাকে মুখে মাস্ক ব্যবহার করা প্রয়োজন। |
পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের ওপর ল্যাবরেটরিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্যের প্রভাব
Effects of chemicals used in the laboratory on the environment and health
রাসায়নিক ল্যাবরেটরিতে বিভিন্ন প্রকার এসিড, শক্তিশালী ক্ষার, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন ধাতুর লবণ, বিভিন্ন জৈব দ্রাবক ব্যবহৃত হয়। এগুলোর অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে তা কোন না কোনভাবে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং উদ্ভিদ ও প্রাণিদেহে প্রবেশ করে। এর ক্ষতিকর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। ল্যাবরেটরিতে এগুলির অতিরিক্ত ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। ভারী ধাতুর আয়ন \(Pb^{2+}, \ Hg^{2+}, \ Cd^{2+}, \ Cr^{2+}\) প্রাণিদেহে প্রবেশ করলে প্রাণিদেহের এনজাইমের কার্যক্ষমতা বিনষ্ট হয় এবং সাথে সাথে শরীরে বিষক্রিয়া ঘটে।
বিভিন্ন ভারী শিল্প কারখানা যেমন- চামড়া শিল্প, ডাইং শিল্প, কাগজ, রেয়ন, সার ইত্যাদি শিল্পক্ষেত্রের ল্যবরেটরিতে পরিবেশের উপর মারাত্মক ক্ষতিকর উপাদানের ব্যবহার হয়ে থাকে। এসব রাসায়নিক দ্রব্যের অতিরিক্ত ব্যবহার পরিবেশের জন্য যে কতটা ক্ষতিকারক তা কল্পনা করা যায় না। এসব রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার খুবই স্বল্পমাত্রায় এবং নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা উচিত। তাই এসব শিল্প কারখানা স্থাপনের পূর্বে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে পূর্ব অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হয়।
বিভিন্ন ভারী শিল্প কারখানা যেমন- চামড়া শিল্প, ডাইং শিল্প, কাগজ, রেয়ন, সার ইত্যাদি শিল্পক্ষেত্রের ল্যবরেটরিতে পরিবেশের উপর মারাত্মক ক্ষতিকর উপাদানের ব্যবহার হয়ে থাকে। এসব রাসায়নিক দ্রব্যের অতিরিক্ত ব্যবহার পরিবেশের জন্য যে কতটা ক্ষতিকারক তা কল্পনা করা যায় না। এসব রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার খুবই স্বল্পমাত্রায় এবং নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা উচিত। তাই এসব শিল্প কারখানা স্থাপনের পূর্বে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে পূর্ব অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হয়।
পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর ল্যাবরেটরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যের প্রভাবঃ
রাসায়নিক দ্রব্য | স্বাস্থ্যের প্রতি-প্রতিক্রিয়া | পরিবেশের উপর প্রতিক্রিয়া |
১। হাইড্রোক্লোরিক এসিড \(HCl\) | \(HCl\) গ্যাস মারাত্মক বিষাক্ত এবং এসিড হিসেবে ত্বক ক্ষয়কারী। ইহা মুখ, গলা ও শ্বাসনালীতে প্রদাহের সৃষ্টি করে। \(HCl\) গ্যাস বেশি গ্রহন করলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। | \(HCl\) এসিড একটি সবল এসিড। এটি পানিতে পূর্ণভাবে আয়নিত হয়ে পানির \(pH\) মান দ্রুত হ্রাস করে। ফলে জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর ইকোসিস্টেমের মারাত্মক ক্ষতি করে। |
২। সালফিউরিক এসিড \(H_{2}SO_{4}\) | \(H_{2}SO_{4}\) এসিড একটি মারাত্মক ক্ষয়কারী, তীব্র জারক ও তীব্র-নিরুদক। এ এসিড বাষ্প চোখ, মুখ ও শ্বাসনালিতে প্রদাহ এবং ত্বকে ফোস্কা সৃষ্টি করে। এমনকি ফুসফুসও আক্রান্ত হয়। ত্বকে পড়লে ক্ষত সৃষ্টি হয়। | \(H_{2}SO_{4}\) এসিড মাটিতে ও পানিতে মিশলে \(pH\) মানের দ্রুত হ্রাস ঘটে। জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর ইকোসিস্টেমের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে। মাটির অনুজীবকে ধ্বংস করে। ফলে ঐ মাটিতে আর উদ্ভিদ জন্মাতে পারে না। |
৩। নাইট্রিক এসিড \(HNO_{3}\) | মারাত্মক ক্ষয়কারী ও তীব্র জারক হওয়ায় ত্বকের প্রদাহ, চোখ-মুখ জবালাপোড়া করে। \(HNO_{3}\) বাষ্প এর বিযোজনে সৃষ্ট \(NO_{2}\) গ্যাস তীব্র শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করে থাকে; এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। | \(HNO_{3}\) এসিড পানিতে মিশে পানির \(pH\) মানের দ্রুত হ্রাস ঘটায়। মাছ অন্যান্য জলজ প্রাণিদের ডিম পাড়া এবং বংশ বিস্তারে বিঘ্ন ঘটে। ক্ষয়কারী হওয়ায় \(HNO_{3}\) এসিড মাটিতে মিশে মাটির খনিজ উপাদানকে ধ্বংস করে থাকে। |
৪। কস্টিক সোডা \(NaOH\) কস্টিক পটাস \(KOH\) | \(NaOH\) ও \(KOH\) হলো ক্ষয়কারী রাসায়নিক উপাদান। মাত্র \(10\)% (w/v) \(NaOH\) বা \(KOH\) এর জলীয় দ্রবণ \(30\) সেকেন্ডের মধ্যে চোখ অন্ধ করে দিতে পারে। কোনোভাবে মুখে প্রবেশ করলে গলা, শ্বাসনালি ও পাকস্থলির মারাত্মক প্রদাহজনিত সংক্রমণ ঘটে। | \(NaOH\) বা \(KOH\) এর দ্রবণ পানিতে মিশে পানির দূষণ ঘটায়। পানির \(pH\) মানের দ্রুত বৃদ্ধি করে। জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর ক্ষতি হয়। |
৫। অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড \(NH_{4}OH\) লিকার অ্যামোনিয়া 35%-40% \(NH_{3}\) এর সম্পৃক্ত দ্রবণ | তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ যুক্ত \(NH_{3}\) গ্যাস শ্বাসের সাথে প্রবেশ করলে মারাত্মক শ্বাসকষ্ট, গলা ও শ্বাসনালিতে প্রদাহ সৃষ্টি করে। চোখ জ্বালাপোড়া করে এবং মুহূর্তের মধ্যে চোখ রক্তবর্ণ ধারণ করে। সর্দি কাশিতে মৃদু \(NH_{3}\) গ্যাস নাকের পানি ঝরা বন্ধ করে। | এটি জলাশয়ের পানিতে দ্রবীভূত হলে পানির \(pH\) বৃদ্ধি করে; মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণীদের মুহূর্তের মধ্যে মৃত্যু ঘটে। অ্যামোনিয়া দ্রবীভূত পানি পান করলে পশুরও মৃত্যু ঘটে। \(NH_{3}\) গ্যাস বায়ুতে মিশে গেলে গাছপালা ঝলসেযায়, পাখিরা মরে যায়, মানুষ শ্বাসকষ্টে ভোগে, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। |
৬। সোডিয়াম বাই কার্বনেট \(NaHCO_{3}\) সোডিয়াম কার্বনেট \(Na_{2}CO_{3}\) | \(NaHCO_{3}\) এবং \(Na_{2}CO_{3}\) এর সূক্ষ্ণ গুঁড়া শ্বাসের সাথে শরীরে প্রবেশ করলে শ্বাসনালি আক্রান্ত হয়। ত্বক বা চোখে-মুখে এর গাঢ় দ্রবণ পড়লে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। | \(NaHCO_{3}\) এবং \(Na_{2}CO_{3}\) পানিতে মিশে পানির \(pH\) মানের বৃদ্ধি ঘটায়। মাটিতে মিশে অণুজীবকে ধ্বংস করে। মাটির খনিজ উপাদানের সাথ মিলে মাটির ক্ষারকত্ব বৃদ্ধি করে। |
৭। পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট \(KMnO_{4}\) | \(KMnO_{4}\) হলো একটি তীব্র ক্ষয়কারক, জারক ও বিষাক্ত উপাদান। এটির গাঢ় দ্রবণ শরীরের ত্বকের সংস্পর্শে ক্ষতের সৃষ্টি করে। পেটে গেলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ। এর প্রভাবে কিডনি সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়। | এটি দ্রবীভূত অবস্থায় পানির DO এর পরিমাণকে মারাত্মকভাবে হ্রাস করে। ফলে মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণীর বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়। মাটির অণুজীবকে ধ্বংস করে এবং মাটির উর্বরা শক্তি হ্রাস পায়। |
৮। পটাসিয়াম ডাইক্রোমেট \(K_{2}Cr_{2}O_{7}\) | \(K_{2}Cr_{2}O_{7}\) হলো একটি তীব্র ক্ষয়কারক, জারক ও বিষাক্ত উপাদান। ত্বকের সংস্পর্শে ক্ষতের সৃষ্টি করে। পেটে গেলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। | এটি দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণকে হ্রাস করে। ফলে মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণীর বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়। মাটির উর্বরা শক্তির হ্রাস ঘটে এবং মাটির অণুজীবকে ধ্বংস করে। |
৯। পটাসিয়াম ফেরোসায়ানাইড \(K_{4}[Fe(CN)_{6}]\) | শ্বাসের মাধ্যমে এটি শরীরে প্রবেশ করলে গলা, শ্বাসনালি ও ফুসফুসের কাশিসহ মারাত্মক ক্ষতি হয়। শরীরের ত্বক ও চোখে জ্বালাসহ ক্ষতের সৃষ্টি হয়। পাকস্থলিতে প্রবেশ করলে পেটে ব্যাথা, বমি ও ডায়রিয়া হতে পারে। | পটাসিয়াম ফেরোসায়ানাইড পানি ও মাটি উভয়কেই মারাত্মকভাবে দূষিত করে। |
১০। পটাসিয়াম আয়োডাইড \(KI\) | এটি ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি করে। শরীরে প্রবেশ করলে রক্তশূন্যতা, ওজন কমে যাওয়া অবসাদ প্রবণতার সৃষ্টি করে। | এটি পানিতে অধিক মিশলে পানি বিষাক্ত হয়। মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যায়। জৈব উপাদানের পচন কমে যায়। |
১১। হাড্রোজেন পারঅক্সাইড \(H_{2}O_{2}\) | এটি একটি বিষাক্ত, তীব্র জারণধর্মী, স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও পরিবেশ ঝুঁকির রাসায়নিক উপাদান। এটি ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। | পরিবেশের ক্ষতি করে এরূপ রাসায়নিক উপাদানের অন্যতমের মধ্যে এটি অন্তর্ভুক্ত। |
১২। ক্লোরোফরম \(CHCl_{3}\) | ক্লোরোফরম কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি করে। শ্বাসপ্রশ্বাসের ক্ষেত্রে শ্বাসনালি ও ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি করে। বেশি পরিমাণে ফুসফুসে প্রবেশ করলে মৃত্যু অনিবার্য। | ক্লোরোফরম পানিতে দ্রবীভূত হয়ে পানিতে উপস্থিত সূক্ষ্ণ অণুজীব ধবংশ করে। ফলে পানির DO, BOD ও COD এর ভারসাম্য বিনষ্ট করে। |
১৩। ফমালিন \(H-CHO\) এর 40% জলীয় দ্রবণ | ফরম্যালডিহাইড শরীরে প্রবেশ করলে কিডনি নষ্ট হতে পারে। এতে ক্যান্সার রোগও হতে পারে। | ফমালিন পচনরোধক ও ক্ষুদ্র প্রাণিকোষ ধবংশ করে। পরিবেশের ক্ষতি করে। |
১৪। প্রোপানোন \(CH_{3}COCH_{3}\) | এটি উদায়ী হওয়ায় শ্বাসপ্রশ্বাসে শরীরে প্রবেশ করলে মাথা ব্যাথা, বমি বমি ভাব ও অবসাদগ্রস্ততা হতে পারে। | এটি পানিতে DO এর মারাত্মকভাবে হ্রাস ঘটায়। জলজ প্রাণীর উপর এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়। |
১৫। সাবান ও ডিটারজেন্ট | উভয় যৌগ জৈব দূষক। অধিক ব্যবহারে দেহের ত্বকের ক্ষতি করে। | এদেরকে সরাসরি পরিবেশে ফেলা যাবে না। এরা মারাত্মকভাবে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটায়। |
১৬। \(Na, \ NaH\) ও \(LiAlH_{4}\) | ত্বকে মারাত্মক ক্ষত সৃষ্টি করে। জলীয় বাষ্পের সংস্পর্শে প্রবল বিক্রিয়ায় ক্ষার, \(H_{2}\) ও তাপ উৎপন্ন করে। | পানির সংস্পর্শে ক্ষার \(NaOH, \ LiOH\) দ্রবণ ও \(Al(OH)_{3}(s)\) উৎপন্ন হয়। ফলে মাটি ও পানির \(pH\) বৃদ্ধি পায়। পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। |
রাসায়নিক দ্রব্যের পরিমিত ব্যবহারের গুরুত্ব
Importance of Minimum Use of Chemicals
রাসায়নিক ল্যাবরেটরি থেকে নির্গত বর্জ্য পরিবেশের মারাত্মক দূষণ ঘটায়। তাই প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ল্যাবরেটরিতে রাসায়নিক বস্তু ব্যবহারে অত্যাধিক সতর্ক থাকতে হবে। ন্যূনতম পরিমাণ বিকারক ব্যবহার করে পরিক্ষা কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
রাসায়নিক দ্রব্যের পরিমিত ব্যবহারে শিক্ষার্থীদের ল্যাবরেটরিতে বিভিন্ন কার্যক্রমে নিম্নোক্ত বিষয় অনুসরণ করা উচিত।
পরীক্ষাকালে টেস্টটিউবে রাসায়নক বিকারক খুব কম ব্যবহার করতে হবে। বিক্রিয়াগুলো সচেতনভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
পরিবেশ ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ও জৈব দ্রাবক পদার্থ ব্যবহারে শিক্ষার্থীদের মিতব্যয়ী হতে হবে।
পাতিত পানি বা ডিস্টিল ওয়াটার ব্যবহার যথাসম্ভব কম করতে হবে।
বুনসেন বার্ণারে গ্যাস ব্যবহার ও বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতন থাকতে হবে।
শিক্ষার্থীরা গ্রুপ করে কাজ করলে রাসায়নিক পদার্থের সাশ্রয় হবে।
শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় রাসায়নিক পদার্থ পূর্ব থেকেই ওজন করে রাখতে হবে। এতে অপচয় কম হবে এবং শিক্ষার্থীদের ল্যাব-সময় অধিকতর কার্যকর হবে।
শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহারিক কার্যক্রম এমনভাবে প্রণয়ন করতে হবে যেন রাসায়নিক বস্তুর ব্যবহার সর্বনিম্ন থাকে। বর্তমানে স্কুল ও কলেজে কেমিস্ট্রি ল্যাবসমূহে অনুসৃত ম্যাক্রো বিশ্লেষণ পদ্ধতির পরিবর্তে সেমিমাইক্রো বিশ্লেষণ পদ্ধতি অনুসরণ করা হলে ল্যাবরেটরি বর্জ্য রাসায়নিক দূষণ মাত্রার হ্রাস ঘটবে। অর্থাৎ ল্যাবরেটরিতে উন্নত ব্যবহারিক কার্যক্রমে পরিবেশের ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার হ্রাস করতে হবে।
ল্যাবরেটরিতে এসব রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার পরিমিতভাবে করা উচিত। ফলে ল্যাবরেটরির রাসায়নিক পদার্থের অপচয়ও কমবে, অর্থ খরচ কমবে ও প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় থাকবে।
পরিবেশ ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ও জৈব দ্রাবক পদার্থ ব্যবহারে শিক্ষার্থীদের মিতব্যয়ী হতে হবে।
পাতিত পানি বা ডিস্টিল ওয়াটার ব্যবহার যথাসম্ভব কম করতে হবে।
বুনসেন বার্ণারে গ্যাস ব্যবহার ও বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতন থাকতে হবে।
শিক্ষার্থীরা গ্রুপ করে কাজ করলে রাসায়নিক পদার্থের সাশ্রয় হবে।
শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় রাসায়নিক পদার্থ পূর্ব থেকেই ওজন করে রাখতে হবে। এতে অপচয় কম হবে এবং শিক্ষার্থীদের ল্যাব-সময় অধিকতর কার্যকর হবে।
শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহারিক কার্যক্রম এমনভাবে প্রণয়ন করতে হবে যেন রাসায়নিক বস্তুর ব্যবহার সর্বনিম্ন থাকে। বর্তমানে স্কুল ও কলেজে কেমিস্ট্রি ল্যাবসমূহে অনুসৃত ম্যাক্রো বিশ্লেষণ পদ্ধতির পরিবর্তে সেমিমাইক্রো বিশ্লেষণ পদ্ধতি অনুসরণ করা হলে ল্যাবরেটরি বর্জ্য রাসায়নিক দূষণ মাত্রার হ্রাস ঘটবে। অর্থাৎ ল্যাবরেটরিতে উন্নত ব্যবহারিক কার্যক্রমে পরিবেশের ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার হ্রাস করতে হবে।
ল্যাবরেটরিতে এসব রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার পরিমিতভাবে করা উচিত। ফলে ল্যাবরেটরির রাসায়নিক পদার্থের অপচয়ও কমবে, অর্থ খরচ কমবে ও প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় থাকবে।
আয়তনিক বিশ্লেষণ কাজে ব্যবহৃত রাসায়নিক নিক্তি বা ব্যালেন্স
Chemical Balance Used for Volumetric Analysis
রাসায়নিক নিক্তি বা ব্যালেন্সঃ আয়তনিক বিশ্লেষণ কাজে রাসায়নিক পদার্থকে গ্রাম এককের দশমিক দ্বিতীয় স্থান থেকে চতুর্থ স্থান পর্যন্ত সঠিকভাবে পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত নিক্তিকে রাসায়নিক নিক্তি বা কেমিক্যাল ব্যালেন্স (Chemical Balance) বলে। রাসায়নিক নিক্তি দুই প্রকার যথা- পল-বুঙ্গী ব্যালেন্স এবং সারটোরিয়াস ব্যালেন্স। বর্তমানে সারটোরিয়াস ব্যালেন্সের ব্যবহার না থাকায় কেমিক্যাল ব্যালেন্স রূপে প্রধানত পল-বুঙ্গী ব্যালেন্স অথবা ডিজিটাল ব্যালেন্স ব্যবহৃত হয়।
রাসায়নিক নিক্তির ব্যবহারঃ কেবলমাত্র প্রাইমারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থের ওজন গ্রাম এককের দশমিক চতুর্থ স্থান পর্যন্ত সঠিকভাবে নেয়ার জন্য কেমিক্যাল ব্যালেন্স বা রাসায়নিক নিক্তি ব্যবহৃত হয়। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রি ল্যাবরেটরিতে এবং ওষুধ শিল্পোৎপাদনে মূলত কেমিক্যাল ব্যালেন্স ব্যবহৃত হয়।
প্রাইমারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থঃ প্রাইমারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থের চারটি বৈশিষ্ট থাকে। যেমন- এরা বিশুদ্ধ রাসায়নিক পদার্থ, এরা বায়ুর উপাদানের সাথে বিক্রিয়া করে না, রাসায়নিক নিক্তির ক্ষয় করে না, এদের দ্বারা প্রস্তুত দ্রবণের ঘনমাত্রা দীর্ঘদিন অপরিবর্তিত থাকে। এরূপ প্রাইমারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থ হলো \(Na_{2}CO_{3}\) অক্সালিক এসিড, পটাসিয়াম ডাইক্রোমেট (\(K_{2}Cr_{2}O_{7}\)) ইত্যাদি। প্রাইমারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থ থেকে প্রমাণ দ্রবণ (0.1 M) তৈরি করা হয়।
রাসায়নিক নিক্তির ব্যবহারঃ কেবলমাত্র প্রাইমারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থের ওজন গ্রাম এককের দশমিক চতুর্থ স্থান পর্যন্ত সঠিকভাবে নেয়ার জন্য কেমিক্যাল ব্যালেন্স বা রাসায়নিক নিক্তি ব্যবহৃত হয়। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রি ল্যাবরেটরিতে এবং ওষুধ শিল্পোৎপাদনে মূলত কেমিক্যাল ব্যালেন্স ব্যবহৃত হয়।
প্রাইমারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থঃ প্রাইমারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থের চারটি বৈশিষ্ট থাকে। যেমন- এরা বিশুদ্ধ রাসায়নিক পদার্থ, এরা বায়ুর উপাদানের সাথে বিক্রিয়া করে না, রাসায়নিক নিক্তির ক্ষয় করে না, এদের দ্বারা প্রস্তুত দ্রবণের ঘনমাত্রা দীর্ঘদিন অপরিবর্তিত থাকে। এরূপ প্রাইমারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থ হলো \(Na_{2}CO_{3}\) অক্সালিক এসিড, পটাসিয়াম ডাইক্রোমেট (\(K_{2}Cr_{2}O_{7}\)) ইত্যাদি। প্রাইমারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থ থেকে প্রমাণ দ্রবণ (0.1 M) তৈরি করা হয়।
পল-বুঙ্গী ব্যালেন্স
Paul-Bunge Balance
যে রাসায়নিক ব্যালেন্সে তুলাদণ্ডে বাম পাশে শূণ্য দাগ হতে ডানপাশে 100 টি পর্যন্ত দাগ থাকে তাকে পল বুঙ্গি ব্যালেন্স বলে। পল বুঙ্গি ব্যালেন্সটি 1866 খ্রিস্টাব্দে জার্মান প্রকৌশলী Paul Bunge আবিষ্কার করেন। তার নামানুসারে ব্যালেন্সটির নাম পল বুঙ্গি রাখা হয়েছে। পল বুঙ্গি ব্যালেন্সের সাহায্যে সর্বনিম্ন 0.0001g পর্যন্ত ওজন পরিমাপ করা যায়।
কাচের বক্সযুক্ত বেদীঃ পল-বুঙ্গী ব্যালেন্সের বেডীটি হলো আয়তাকার। এটি গ্রানাইট পাথর বা ইবোনাইট (Ebonite) নামক শক্ত রাবারের তৈরি। কাচের বক্সটি এ বেদীর সাথে যুক্ত থাকে। মূল পল-বুঙ্গী ব্যালেন্সটি কাচের বক্স বা কক্ষের ভিতর বেদীর ওপর খাড়াভাবে বসানো থাকে। বেদীটির নিচে সামনের দিকে ডানে ও বামে দুইটি ওপেছনের দিকে ঠিক মাঝখানে একটি করে মোট তিনটি লেভেলিং বা সমতলকারী স্ক্রু থাকে। সামনের লেভেলিং স্ক্রু দুইটিকে ডানে ও বামে ঘুরিয়ে বেদীর লেভেল ঠিক করা হয়। তখন বেদীর সামনে থাকা স্পিরিট লেভেলের ভিতর বুদ্বুদ্ মাঝখানে থাকে। অথবা দোলকের সূঁচালু মুখ ও স্তম্ভের সাথে যুক্ত স্থির সূঁচালু মুখ দুইটি বরাবর থাকে। বেদীর ডান দিকে পাল্লা ওঠানো ও নামানোর জন্য একটি হ্যান্ডল থাকে। এ হ্যান্ডল দ্বারা ব্যালেন্সটিকে সচল বা বন্ধ করা হয়।
স্তম্ভ বা কলামঃ স্তম্ভ বা কলামটি হলো ব্রাশ বা পিতলের তৈরি ফাঁপা নল। এটি বেদীর মাঝখানে খাড়াভাবে যুক্ত থাকে। এ ফাঁপা স্তম্ভের ভিতর একটি ধাতব দণ্ড থাকে। এ ধাতব দণ্ডটির নিচের প্রান্ত হ্যান্ডেলের দণ্ডের সাথে যুক্ত থাকে এবং অপরের প্রান্তের সাথে যুক্ত মসৃণ এগেট (Agate) সমতলের অপরে নিক্তির তুলাদণ্ডের বা বিমের প্রিজমাকৃতির কেন্দ্রীয় ছুরির ফলকটি (Knife edge) স্থাপন করা হয়। হ্যান্ডলের সাহায্যে তুলাদণ্ডটিকে ওঠানামা করে ব্যালেন্সটিকে সচল বা বন্ধ করা যায়। স্তম্ভ বা কলামের ওপরের দুদিকে সমান দুইটি আনুভূমিক দণ্ড ক্লিপ দ্বারা যুক্ত থাকে। এ দণ্ড দুটির দু'প্রান্তে দুটি ধারক থাকে। ব্যালেন্সটি স্থির অবস্থায় ঐ ধারক দুটির ওপর দাগাংকিত বিম বা মূল তুলাদণ্ডটি অবস্থান করে।
তুলাদণ্ড বা বিম ও পাল্লাঃ সবচেয়ে ওপরের চ্যাপ্টাকৃতির দাগাংকিত বিম বা তুলাদণ্ডটি হলো রাসায়নিক নিক্তির প্রধান অংশ। এ বিম বা তুলাদণ্ডটি অ্যালুমিনিয়াম ধাতু অথবা পিতল দ্বারা তৈরি। এ তুলাদণ্ডের দু'পার্শে ও কেন্দ্রবিন্দুতে একটি করে মোট তিনটি মসৃণ এগেট পাথরের প্রিজমাকৃতির ছুরির ফলক (Knife edge) যুক্ত থাকে। দু'পার্শের দুটি ফলকের সাথে দুটি সমান পাল্লা (Pan) ঝুলানো থাকে। কেন্দ্রীয় ছুরির ফলকটি স্তম্ভের ভেতরে থাকা ধাতব দণ্ডটির এগেট সমতলের ওপর অবস্থান করে। এগেট পাথরের সমতলের ওপর এগেট পাথরের ছুরির ফলক মুক্তভাবে দুলতে পারে। তুলাদণ্ডের দু'প্রান্তে দুটি স্ক্রু সংযুক্ত থাকে। প্রয়োজনমতো এ স্ক্রু ঘুরিয়ে তুলাদণ্ডের সাথে যুক্ত পয়েন্টারটিকে স্তম্ভের নিচে যুক্ত মূল স্কেলের শূন্য দাগে রাখা হয়।
বিম বা তুলাদণ্ডটির গায়ে একটি দাগ কাটা স্কেল থাকে। দাগাংকিত বিমে এ স্কেল করার প্রকৃতি অনুসারে রাসায়নিক ব্যালেন্সের দু'প্রকার নাম হয়েছে। একটি পল-বুঙ্গী ব্যালেন্স ও অপরটি সারটোরিয়াস ব্যালেন্স। পল-বুঙ্গী ব্যালেন্সে বিমের বাম প্রান্তের দাগে শূন্য (0) ও ডান প্রান্তের দাগে একশত (100) চিহ্নিত থাকে। অর্থাৎ তুলাদণ্ডটি সমান একশত (100) ভাগে দাগাংকিত থাকে। সারটোরিয়াস ব্যালেন্সে বমের মাঝখানে শূন্য (0) দাগ ধরে বাম ও ডান দিকে ৫০ টি করে দাগাংকিত থাকে।
রাইডার ও রাইডার বাহকঃ রাইডার বা আরোহী হলো 5mg অথবা 10mg ভরের স্থানান্তরযোগ্য Pt বা Al ধাতুর একটি লুপ (loop) বা প্যাচানো তার। এটিকে একটি ধাতব শলাকার সাহায্যে কাচের বক্সের বাইরে থেকে তুলাদণ্ডের বা বিমের ওপর স্থানান্তর করা যায়। এ শলাকাটিকে রাইডার বাহক বলে। 5mg বা 10mg ভরের রাইডার ওজন বক্সে (Weight box) থাকে। চিমটার সাহায্যে ওজন বক্স থেকে রাইডার নিয়ে রাইডার বাহকের সাহায্যে তুলাদণ্ডের শূন্য (0) দাগে রেখে ব্যালেন্সটিকে সমতা সাধন করা হয়। সমতা করার জন্য তুলাদণ্ডের দু'প্রান্তে স্ক্রু দুটিকে প্রয়োজনমতো বামে বা ডানে ঘুরিয়ে দিতে হয়। তখন তুলাদণ্ডের সাথে যুক্ত পয়েন্টারটি নিচের স্কেলে শূন্য (0) দাগে আসলে ব্যালেন্স বা নিক্তিটি সমতাযুক্ত হয়েছে বোঝায়। এ অবস্থায় ব্যালেন্স বা নিক্তিটি ব্যবহারযোগ্য।
ওজন বক্সঃ রাসায়নিক নিক্তির একটি পৃথক ওজন বক্স (Weight box) থাকে। তাতে \(1 g\) থেকে \(100 g\) এবং \(5 mg\) থেকে \(500 mg\) পরিমাপের অনেকগুলো ওজন থাকে। রাসায়নিক নিক্তির বাম পাল্লায় রাসায়নিক রাসায়নিক দ্রব্যটি এবং এর ডান পাল্লায় এসব ওজন স্থাপন করে কোনো দ্রব্যের ওজন গ্রাম এককের তিন দশমিক স্থান পর্যন্ত নির্ণয় করা যায়। কিন্তু রাসায়নিক মাত্রিক বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সূক্ষ্ণ সঠিক ওজন নির্ণয়ের স্বার্থে প্রায়ই গ্রাম এককের চার দশমিক স্থান পর্যন্ত মান প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে রাইডার ব্যবহৃত হয়। তখন \(5 mg\) অথবা \(10 mg\) রাইডার নিক্তির তুলাদণ্ড বা বিমের বাম দিকের শূন্য (0) দাগে রেখে নিক্তির ডান দিকের সমন্বয়কারী স্ক্রু ঘুরিয়ে নিক্তির সমতা সাধন করতে হয়।
রাইডারঃ পল-বুঙ্গী ব্যালেন্সে এক গ্রামের চতুর্থ দশমিক স্থান পর্যন্ত পরিমাপের জন্য \(5 mg\) অথবা \(10 mg\) ভরের স্থানান্তরযোগ্য Al ধাতুর একটি লুপ (loop) যুক্ত বা প্যাঁচানো তার ব্যালেন্সের বিমের ওপর ব্যবহৃত হয়, এটিকে নিক্তির রাইডার বলে।
পল-বুঙ্গী ব্যালেন্সে ওজন নেয়ার পূর্বে \(5 mg\) রাইডার বিমের শূন্য (0) দাগে রেখে ডান দিকের বিমের স্ক্রু সরিয়ে সমতা আনয়ন করা হয়। কাজেই শূন্য (0) দাগ থেকে রাইডারকে একশত (100) দাগে বিমের ডান দিকে নিলে প্রকৃতপক্ষে ডান পাল্লায় \(5 mg\times2=10 mg\) ওজন যোগ করার সামিল (কারণ বামে শূন্য (0) দাগে \(5 mg\) রাইডার রেখে স্ক্রু নেড়ে ডান দিকে একশত (100) দাগে অদৃশ্য \(5 mg\) ওজন যোগ করে সমতা আনয়ন করা হয়েছে। এখন বামের \(5 mg\) রাইডারকেও একশত (100) দাগে রাখলে মোট \(10 mg\) কার্যকর হয়ে থাকে।) সুতরাং একশত (100) ভাগ দৈর্ঘ্যের বিম বা তুলাদণ্ডটি \(10 mg\) ওজনের রাইডারের সচল কার্যক্ষেত্র।
রাইডার ধ্রুবকঃ রাসায়নিক নিক্তির বিমের দৈর্ঘ্যের ওপর প্রতি শতাংশে ব্যবহৃত রাইডারের ওজনের পার্থক্যকে রাইডার ধ্রুবক (Rider Constant) বলে।
পল-বুঙ্গী ব্যালেন্সের ক্ষেত্রে রাইডার ধ্রুবক গণনাঃ
\((i)\) \(5 mg\) রাইডার ব্যবহার করলে তখন রাইডার ধ্রুবক হবে \(=\frac{5 mg\times2}{100}=0.1 mg=0.0001 g\)
\((ii)\) \(10 mg\) রাইডার ব্যবহার করলে তখন রাইডার ধ্রুবক হবে \(=\frac{10 mg\times2}{100}=0.2 mg=0.0002 g\)
সারটোরিয়াস ব্যালেন্সের ক্ষেত্রে রাইডার ধ্রুবক গণনাঃ বিমের মাঝখানে শূন্য (0) দাগ এবং ডানে ও বামে \(50\) টি করে দাগ থাকে। এক্ষেত্রে রাইডার ধ্রুবক-
\((i)\) \(5 mg\) রাইডার ব্যবহার করলে তখন রাইডার ধ্রুবক হবে \(=\frac{5 mg}{50}=0.1 mg=0.0001 g\)
\((ii)\) \(10 mg\) রাইডার ব্যবহার করলে তখন রাইডার ধ্রুবক হবে \(=\frac{10 mg}{50}=0.2 mg=0.0002 g\)
সারটোরিয়াস ব্যালেন্সের ক্ষেত্রে রাইডার বাম দিকের দাগে থাকলে রাইডারজনিত ওজন পাল্লায় রাখা ওজন থেকে বিয়োগ করতে হবে এবং ডান দিকের দাগে থাকলে রাইডারজনিত ওজন পাল্লায় রাখা ওজনের সাথে যোগ করতে হয়।
পল-বুঙ্গী ব্যালেন্সের ক্ষেত্রে রাইডারজনিত ওজন সবসময় পাল্লায় রাখা ওজনের সাথে যোগ হয়।
গঠনগতভাবে পল-বুঙ্গী ব্যালেন্স প্রধানত চারটি অংশে বিভক্ত। যেমন-

স্তম্ভ বা কলামঃ স্তম্ভ বা কলামটি হলো ব্রাশ বা পিতলের তৈরি ফাঁপা নল। এটি বেদীর মাঝখানে খাড়াভাবে যুক্ত থাকে। এ ফাঁপা স্তম্ভের ভিতর একটি ধাতব দণ্ড থাকে। এ ধাতব দণ্ডটির নিচের প্রান্ত হ্যান্ডেলের দণ্ডের সাথে যুক্ত থাকে এবং অপরের প্রান্তের সাথে যুক্ত মসৃণ এগেট (Agate) সমতলের অপরে নিক্তির তুলাদণ্ডের বা বিমের প্রিজমাকৃতির কেন্দ্রীয় ছুরির ফলকটি (Knife edge) স্থাপন করা হয়। হ্যান্ডলের সাহায্যে তুলাদণ্ডটিকে ওঠানামা করে ব্যালেন্সটিকে সচল বা বন্ধ করা যায়। স্তম্ভ বা কলামের ওপরের দুদিকে সমান দুইটি আনুভূমিক দণ্ড ক্লিপ দ্বারা যুক্ত থাকে। এ দণ্ড দুটির দু'প্রান্তে দুটি ধারক থাকে। ব্যালেন্সটি স্থির অবস্থায় ঐ ধারক দুটির ওপর দাগাংকিত বিম বা মূল তুলাদণ্ডটি অবস্থান করে।
তুলাদণ্ড বা বিম ও পাল্লাঃ সবচেয়ে ওপরের চ্যাপ্টাকৃতির দাগাংকিত বিম বা তুলাদণ্ডটি হলো রাসায়নিক নিক্তির প্রধান অংশ। এ বিম বা তুলাদণ্ডটি অ্যালুমিনিয়াম ধাতু অথবা পিতল দ্বারা তৈরি। এ তুলাদণ্ডের দু'পার্শে ও কেন্দ্রবিন্দুতে একটি করে মোট তিনটি মসৃণ এগেট পাথরের প্রিজমাকৃতির ছুরির ফলক (Knife edge) যুক্ত থাকে। দু'পার্শের দুটি ফলকের সাথে দুটি সমান পাল্লা (Pan) ঝুলানো থাকে। কেন্দ্রীয় ছুরির ফলকটি স্তম্ভের ভেতরে থাকা ধাতব দণ্ডটির এগেট সমতলের ওপর অবস্থান করে। এগেট পাথরের সমতলের ওপর এগেট পাথরের ছুরির ফলক মুক্তভাবে দুলতে পারে। তুলাদণ্ডের দু'প্রান্তে দুটি স্ক্রু সংযুক্ত থাকে। প্রয়োজনমতো এ স্ক্রু ঘুরিয়ে তুলাদণ্ডের সাথে যুক্ত পয়েন্টারটিকে স্তম্ভের নিচে যুক্ত মূল স্কেলের শূন্য দাগে রাখা হয়।
বিম বা তুলাদণ্ডটির গায়ে একটি দাগ কাটা স্কেল থাকে। দাগাংকিত বিমে এ স্কেল করার প্রকৃতি অনুসারে রাসায়নিক ব্যালেন্সের দু'প্রকার নাম হয়েছে। একটি পল-বুঙ্গী ব্যালেন্স ও অপরটি সারটোরিয়াস ব্যালেন্স। পল-বুঙ্গী ব্যালেন্সে বিমের বাম প্রান্তের দাগে শূন্য (0) ও ডান প্রান্তের দাগে একশত (100) চিহ্নিত থাকে। অর্থাৎ তুলাদণ্ডটি সমান একশত (100) ভাগে দাগাংকিত থাকে। সারটোরিয়াস ব্যালেন্সে বমের মাঝখানে শূন্য (0) দাগ ধরে বাম ও ডান দিকে ৫০ টি করে দাগাংকিত থাকে।

রাইডার ও রাইডার বাহকঃ রাইডার বা আরোহী হলো 5mg অথবা 10mg ভরের স্থানান্তরযোগ্য Pt বা Al ধাতুর একটি লুপ (loop) বা প্যাচানো তার। এটিকে একটি ধাতব শলাকার সাহায্যে কাচের বক্সের বাইরে থেকে তুলাদণ্ডের বা বিমের ওপর স্থানান্তর করা যায়। এ শলাকাটিকে রাইডার বাহক বলে। 5mg বা 10mg ভরের রাইডার ওজন বক্সে (Weight box) থাকে। চিমটার সাহায্যে ওজন বক্স থেকে রাইডার নিয়ে রাইডার বাহকের সাহায্যে তুলাদণ্ডের শূন্য (0) দাগে রেখে ব্যালেন্সটিকে সমতা সাধন করা হয়। সমতা করার জন্য তুলাদণ্ডের দু'প্রান্তে স্ক্রু দুটিকে প্রয়োজনমতো বামে বা ডানে ঘুরিয়ে দিতে হয়। তখন তুলাদণ্ডের সাথে যুক্ত পয়েন্টারটি নিচের স্কেলে শূন্য (0) দাগে আসলে ব্যালেন্স বা নিক্তিটি সমতাযুক্ত হয়েছে বোঝায়। এ অবস্থায় ব্যালেন্স বা নিক্তিটি ব্যবহারযোগ্য।
ওজন বক্সঃ রাসায়নিক নিক্তির একটি পৃথক ওজন বক্স (Weight box) থাকে। তাতে \(1 g\) থেকে \(100 g\) এবং \(5 mg\) থেকে \(500 mg\) পরিমাপের অনেকগুলো ওজন থাকে। রাসায়নিক নিক্তির বাম পাল্লায় রাসায়নিক রাসায়নিক দ্রব্যটি এবং এর ডান পাল্লায় এসব ওজন স্থাপন করে কোনো দ্রব্যের ওজন গ্রাম এককের তিন দশমিক স্থান পর্যন্ত নির্ণয় করা যায়। কিন্তু রাসায়নিক মাত্রিক বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সূক্ষ্ণ সঠিক ওজন নির্ণয়ের স্বার্থে প্রায়ই গ্রাম এককের চার দশমিক স্থান পর্যন্ত মান প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে রাইডার ব্যবহৃত হয়। তখন \(5 mg\) অথবা \(10 mg\) রাইডার নিক্তির তুলাদণ্ড বা বিমের বাম দিকের শূন্য (0) দাগে রেখে নিক্তির ডান দিকের সমন্বয়কারী স্ক্রু ঘুরিয়ে নিক্তির সমতা সাধন করতে হয়।
রাইডারঃ পল-বুঙ্গী ব্যালেন্সে এক গ্রামের চতুর্থ দশমিক স্থান পর্যন্ত পরিমাপের জন্য \(5 mg\) অথবা \(10 mg\) ভরের স্থানান্তরযোগ্য Al ধাতুর একটি লুপ (loop) যুক্ত বা প্যাঁচানো তার ব্যালেন্সের বিমের ওপর ব্যবহৃত হয়, এটিকে নিক্তির রাইডার বলে।
পল-বুঙ্গী ব্যালেন্সে ওজন নেয়ার পূর্বে \(5 mg\) রাইডার বিমের শূন্য (0) দাগে রেখে ডান দিকের বিমের স্ক্রু সরিয়ে সমতা আনয়ন করা হয়। কাজেই শূন্য (0) দাগ থেকে রাইডারকে একশত (100) দাগে বিমের ডান দিকে নিলে প্রকৃতপক্ষে ডান পাল্লায় \(5 mg\times2=10 mg\) ওজন যোগ করার সামিল (কারণ বামে শূন্য (0) দাগে \(5 mg\) রাইডার রেখে স্ক্রু নেড়ে ডান দিকে একশত (100) দাগে অদৃশ্য \(5 mg\) ওজন যোগ করে সমতা আনয়ন করা হয়েছে। এখন বামের \(5 mg\) রাইডারকেও একশত (100) দাগে রাখলে মোট \(10 mg\) কার্যকর হয়ে থাকে।) সুতরাং একশত (100) ভাগ দৈর্ঘ্যের বিম বা তুলাদণ্ডটি \(10 mg\) ওজনের রাইডারের সচল কার্যক্ষেত্র।
রাইডার ধ্রুবকঃ রাসায়নিক নিক্তির বিমের দৈর্ঘ্যের ওপর প্রতি শতাংশে ব্যবহৃত রাইডারের ওজনের পার্থক্যকে রাইডার ধ্রুবক (Rider Constant) বলে।
পল-বুঙ্গী ব্যালেন্সের ক্ষেত্রে রাইডার ধ্রুবক গণনাঃ
\((i)\) \(5 mg\) রাইডার ব্যবহার করলে তখন রাইডার ধ্রুবক হবে \(=\frac{5 mg\times2}{100}=0.1 mg=0.0001 g\)
\((ii)\) \(10 mg\) রাইডার ব্যবহার করলে তখন রাইডার ধ্রুবক হবে \(=\frac{10 mg\times2}{100}=0.2 mg=0.0002 g\)
সারটোরিয়াস ব্যালেন্সের ক্ষেত্রে রাইডার ধ্রুবক গণনাঃ বিমের মাঝখানে শূন্য (0) দাগ এবং ডানে ও বামে \(50\) টি করে দাগ থাকে। এক্ষেত্রে রাইডার ধ্রুবক-
\((i)\) \(5 mg\) রাইডার ব্যবহার করলে তখন রাইডার ধ্রুবক হবে \(=\frac{5 mg}{50}=0.1 mg=0.0001 g\)
\((ii)\) \(10 mg\) রাইডার ব্যবহার করলে তখন রাইডার ধ্রুবক হবে \(=\frac{10 mg}{50}=0.2 mg=0.0002 g\)
সারটোরিয়াস ব্যালেন্সের ক্ষেত্রে রাইডার বাম দিকের দাগে থাকলে রাইডারজনিত ওজন পাল্লায় রাখা ওজন থেকে বিয়োগ করতে হবে এবং ডান দিকের দাগে থাকলে রাইডারজনিত ওজন পাল্লায় রাখা ওজনের সাথে যোগ করতে হয়।
পল-বুঙ্গী ব্যালেন্সের ক্ষেত্রে রাইডারজনিত ওজন সবসময় পাল্লায় রাখা ওজনের সাথে যোগ হয়।
পল-বুঙ্গী ব্যালেন্সের ব্যবহার বিধি
Rules for the use of Paul-Bungi balance
কেবলমাত্র প্রাইমারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থের ওজন গ্রাম এককের দশমিক চতুর্থ স্থান পর্যন্ত সঠিকভাবে নেয়ার জন্য কেমিক্যাল ব্যালেন্স বা রাসায়নিক নিক্তি ব্যবহৃত হয়। পল-বুঙ্গী ব্যালেন্সে এটির ওপরের বিম বা তুলাদণ্ডকে একশত (100) ভাগে ভাগ করে বাম প্রান্তের দাগে শূন্য (0) ও ডান প্রান্তের দাগে একশত (100) চিহ্নিত থাকে। \(5 mg\) বা \(10 mg\) রাইডারকে শূন্য (0) দাগে রেখে ব্যালেন্সের সমতা করা হয়।
পল-বুঙ্গী ব্যালেন্সের পূর্ণ ব্যবহার বিধি নিম্নরূপ-
প্রথমত নিক্তিটি ভূমির সমান্তরালে আছে কিনা তা স্পিরিট লেভেল বা দোলক দেখে জেনে নিতে হয়। যদি ভূমির সমান্তরালে না থাকে তখন স্পিরিট লেভেলের ভেতরের বুদ্বুদ্ মাঝখানে থকবে না অথবা দোলকের সূঁচালো মুখ ও স্তম্ভের সাথে যুক্ত সূঁচালো মুখ দুটি বরাবর থাকে না। তখন নিক্তিটিকে ভূমির সমান্তরাল করার প্রয়োজন হয়। এজন্য বেদীর সাথে যুক্ত অ্যাডজাস্টিং স্ক্রু ঘুরিয়ে এবং স্পিরিট লেভেল দেখে ব্যালেন্সের বেদীকে ভূমির সমান্তরাল করা হয়।
দ্বিতীয়ত কাচের বক্সের সামনের গ্লাসটিকে ওপর দিকে তোলা হয়। নিক্তিটির স্থির অবস্থায় পাল্লায় কিছু আছে কিনা দেখে নিতে হয়। পাল্লা দুটি পরিষ্কার থাকলে নিক্তির হ্যান্ডল ঘুরিয়ে মাঝখানের পয়ন্টার কাটাটি মূল স্কেলের শূন্য (0) দাগের উভয় দিকে সমান সংখ্যক দাগ অতিক্রম করে দোলে কিনা অথবা ব্যালেন্সটি স্থির হলে পয়ন্টার স্কেলের শূন্য (0) দাগে স্থির থাকে কিনা দেখে নিতে হয়। যদি শূন্য (0) দাগে পয়ন্টার স্থির হয়, তবে নিক্তিটি সমতা অবস্থায় আছে। সমতা অবস্থায় নিক্তি না থাকলে তখন তুলাদণ্ডের দু'পার্শের স্ক্রু ঘুরিয়ে নিক্তিটিকে সমতায় আনতে হয়। শেষে হ্যান্ডল ঘুরিয়ে নিক্তিটিকে স্থির অবস্থায় রাখা হয়।
তৃতীয়ত ওজন বক্স থেকে \(5 mg\) অথবা \(10 mg\) রাইডার চিমটার সাহায্যে নিয়ে স্থির অবস্থায় থাকা নিক্তির তুলাদণ্ডের শূন্য (0) দাগের ওপর রাখতে হয় এবং হ্যান্ডল ঘুরিয়ে নিক্তিটিকে সচল করা হয়। এবার নিক্তির তুলাদণ্ডের ডান প্রান্তের স্ক্রু ঘুরিয়ে নিক্তির পয়ন্টারকে মূল স্কেলের শূন্য (0) দাগে আনতে হয়। এ অবস্থায় পল-বুঙ্গী ব্যালেন্সে রাসায়নিক বস্তু ওজন করা যেতে পারে। এরপর রাইডার ধ্রুবক গণনা করে বস্তুর ওজন গ্রহণ করা হয়।
দ্বিতীয়ত কাচের বক্সের সামনের গ্লাসটিকে ওপর দিকে তোলা হয়। নিক্তিটির স্থির অবস্থায় পাল্লায় কিছু আছে কিনা দেখে নিতে হয়। পাল্লা দুটি পরিষ্কার থাকলে নিক্তির হ্যান্ডল ঘুরিয়ে মাঝখানের পয়ন্টার কাটাটি মূল স্কেলের শূন্য (0) দাগের উভয় দিকে সমান সংখ্যক দাগ অতিক্রম করে দোলে কিনা অথবা ব্যালেন্সটি স্থির হলে পয়ন্টার স্কেলের শূন্য (0) দাগে স্থির থাকে কিনা দেখে নিতে হয়। যদি শূন্য (0) দাগে পয়ন্টার স্থির হয়, তবে নিক্তিটি সমতা অবস্থায় আছে। সমতা অবস্থায় নিক্তি না থাকলে তখন তুলাদণ্ডের দু'পার্শের স্ক্রু ঘুরিয়ে নিক্তিটিকে সমতায় আনতে হয়। শেষে হ্যান্ডল ঘুরিয়ে নিক্তিটিকে স্থির অবস্থায় রাখা হয়।
তৃতীয়ত ওজন বক্স থেকে \(5 mg\) অথবা \(10 mg\) রাইডার চিমটার সাহায্যে নিয়ে স্থির অবস্থায় থাকা নিক্তির তুলাদণ্ডের শূন্য (0) দাগের ওপর রাখতে হয় এবং হ্যান্ডল ঘুরিয়ে নিক্তিটিকে সচল করা হয়। এবার নিক্তির তুলাদণ্ডের ডান প্রান্তের স্ক্রু ঘুরিয়ে নিক্তির পয়ন্টারকে মূল স্কেলের শূন্য (0) দাগে আনতে হয়। এ অবস্থায় পল-বুঙ্গী ব্যালেন্সে রাসায়নিক বস্তু ওজন করা যেতে পারে। এরপর রাইডার ধ্রুবক গণনা করে বস্তুর ওজন গ্রহণ করা হয়।
পল-বুঙ্গী ব্যালেন্সের ব্যবহার করে বস্তুর ওজন গ্রহণ
Obtaining the weight of the object using the Paul-Bungi balance
কোনো বস্তু ওজন করার সময় পাল্লায় স্থাপিত ওজনের সঙ্গে রাইডারজনিত ওজন যোগ করলে বস্তুর প্রকৃত ওজন পাওয়া যায়। সাধারণত রাসায়নিক নিক্তির বাম পাল্লায় ওজন করার বস্তু এবং ডান পাল্লায় ওজনগুলো স্থাপন করা হয়।
যেমন- আয়তনিক বিশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দিষ্ট ঘমাত্রার ডেসিমোলার \((0.1M) 500 mL\) বা \(0.5 L\) মেজারিং ফ্লাস্কে একটি দ্রবণ প্রস্তুত করার জন্য \(Na_{2}CO_{3}\) ওজন করতে হবে।
\(500 mL\) ফ্লাস্কে \(0.1M \ Na_{2}CO_{3}\) প্রস্তুতির জন্য \(0.1\) মোল \(Na_{2}CO_{3}\) বা \(5.3 g \ Na_{2}CO_{3}\) প্রয়োজন হয়। এ উদ্দেশে একটি ওজন বোতলে যথেষ্ট পরিমাণ \(Na_{2}CO_{3}\) নেয়া হয়। \(Na_{2}CO_{3}\) সহ ওজন বোতলের ১ম ওজন নেয়া হয়। এরপর ঐ নিদ্দিষ্ট ঘমাত্রার দ্রবণ প্রস্তুতির জন্য যতটুকু \(Na_{2}CO_{3}\) প্রয়োজন তা অথবা তার কাছাকাছি ওজনের \(Na_{2}CO_{3}\) ঐ \(500 mL\) আয়তনিক ফ্লাস্ক বা মেজারিং ফ্লাস্কে স্থানাতরিত করার পর বোতলের আবার ২য় ওজন নেয়া হয়। এ দু ওজনের পার্থক্যই হলো গৃহীত \(Na_{2}CO_{3}\) এর ওজন।
প্রথম ওজন নেয়াঃ মনে করি, এ উদ্দেশ্যে ১ম ওজন নেয়ার সময় পল-বুঙ্গী ব্যালেন্সের বাম পাল্লায় \(Na_{2}CO_{3}\) পূর্ণ ওজন বোতল স্থাপন করে ডান পাল্লায় ওজন বক্স থেকে চিমটার সাহায্যে ১টি \(20 g,\) ১টি \(5 g,\) ১টি \(2 g,\) ১টি \(1 g,\) ১টি \(500 mg,\) ১টি \(100 mg\) ও ১টি \(50 mg\) ওজন স্থাপনের পর অবশিষ্ট সমতা বিধানের জন্য ইতিপূর্বে রাখা \(10 mg\) এর রাইডারটিকে বিমের শূন্য (0) দাগ থেকে নিক্তির ডান দিকে ২৫ দাগ পর্যন্ত সরাতে হলো। এখন হ্যান্ডল ঘুরিয়ে পাল্লা নামিয়ে নিক্তিটিকে স্থির অবস্থায় রাখা হলো।
সুতরাং রাইডার ধ্রুবক হলো \(=\frac{10 mg\times2}{100}=0.0002 g;\)
এক্ষেত্রে \(Na_{2}CO_{3}\) পূর্ণ ওজন বোতলের, ১ম ওজনঃ
\(=(20+5+2+1) g+(500+100+50) mg+25\) বিমের দাগ \(\times\) রাইডার ধ্রুবক
\(=28 g+(0.5+0.1+0.05) g+(25\times0.0002) g\)
\(=28.0000 g+0.6500 g+0.0050 g\)
\(=28.6550 g\)
আয়তনিক ফ্লাস্কে \(Na_{2}CO_{3}\) স্থানান্তরঃ \(500 mL\) আয়তনিক ফ্লাস্কের মুখে ফানেল বসিয়ে ঐ ফানেলের ওপর ওজন বোতল থেকে প্রায় \(5.3 g\) এর কাছাকাছি \(Na_{2}CO_{3}\) গুঁড়া ধীরে ধীরে বোতলে আঙ্গুলের টোকা দিয়ে ঢেলে নেয়া হয়। এবার ওজন বোতলের মুখে স্টপার যুক্ত করে ২য় ওজন নেয়া হয়।
২য় ওজন নেয়াঃ স্থির অবস্থায় থাকা ব্যালেন্সের বাম পাল্লায় ঐ ওজন বোতলটি রেখে ডান পাল্লা থেকে চিমটার সাহায্যে \(5 g\) ও \(1 g\) ওজন দুইটি তুলে নেয়া হয়, কারণ \(5 g\) এর বেশি \(Na_{2}CO_{3}\) 'ওজন বোতল ' থেকে ঢেলে নেয়া হয়েছে। এবার হ্যান্ডল ঘুরিয়ে ব্যালেন্সকে সচল করা হয়। এখন উভয় পাল্লার সমতা আনার জন্য ডান পাল্লা থেকে \(100 mg\) ও \(50 mg\) ওজন তুলে নিয়ে প্রয়োজনমতো \(20 mg\) ও \(10 mg\) ওজন ডান পাল্লায় রাখা হয়। শেষে \(10 mg\) রাইডারটিকে বিমের \(10\) নং দাগে রাখলে ব্যালেন্সটি সমতা লাভ করে।
এখন,
২য় ওজন \(=(20+2) g+(500+20+10) mg +(10\times0.0002) g\)
\(=22 g+(0.5000+0.0200+0.0100) g +0.0020 g\)
\(=22.0000 g+0.5300 g +0.0020 g\)
\(=22.5320 g\)
আয়তনিক ফ্লাস্কে গৃহীত \(Na_{2}CO_{3}\) এর ওজন \(=(\text{১ম ওজন}-\text{২য় ওজন})\)
\(=28.6550 g-22.5320 g\)
\(=6.123 g\)
এরূপে প্রস্তুত \(Na_{2}CO_{3}\) দ্রবণের মোলার ঘনমাত্রা বা মোলারিটি নিম্নরূপে গণনা করা হয়।
\(Na_{2}CO_{3}\) এর মোলার ঘনমাত্রা, \(M= \frac{\text{গৃহীত } Na_{2}CO_{3}\text{ এর মোল সংখ্যা }}{\text{লিটারে দ্রবণের আয়তন}}\)
\(=\frac{\left(\frac{6.123}{106}\right) mol}{0.5 L}\) ➜ \(Na_{2}CO_{3}\) এর মোলার ভর \(=106 g\)
\(=\left(\frac{6.123}{106\times0.5}\right)mol \ L^{-1}\)
\(=\left(\frac{6.123}{53}\right) mol \ L^{-1}\)
\(=0.1155 \ mol \ L^{-1}\)
অতএব, প্রস্তুত \(Na_{2}CO_{3}\) এর মোলার ঘনমাত্রা \(M=0.1155 \ mol \ L^{-1}\)
প্রথম ওজন নেয়াঃ মনে করি, এ উদ্দেশ্যে ১ম ওজন নেয়ার সময় পল-বুঙ্গী ব্যালেন্সের বাম পাল্লায় \(Na_{2}CO_{3}\) পূর্ণ ওজন বোতল স্থাপন করে ডান পাল্লায় ওজন বক্স থেকে চিমটার সাহায্যে ১টি \(20 g,\) ১টি \(5 g,\) ১টি \(2 g,\) ১টি \(1 g,\) ১টি \(500 mg,\) ১টি \(100 mg\) ও ১টি \(50 mg\) ওজন স্থাপনের পর অবশিষ্ট সমতা বিধানের জন্য ইতিপূর্বে রাখা \(10 mg\) এর রাইডারটিকে বিমের শূন্য (0) দাগ থেকে নিক্তির ডান দিকে ২৫ দাগ পর্যন্ত সরাতে হলো। এখন হ্যান্ডল ঘুরিয়ে পাল্লা নামিয়ে নিক্তিটিকে স্থির অবস্থায় রাখা হলো।
সুতরাং রাইডার ধ্রুবক হলো \(=\frac{10 mg\times2}{100}=0.0002 g;\)
এক্ষেত্রে \(Na_{2}CO_{3}\) পূর্ণ ওজন বোতলের, ১ম ওজনঃ
\(=(20+5+2+1) g+(500+100+50) mg+25\) বিমের দাগ \(\times\) রাইডার ধ্রুবক
\(=28 g+(0.5+0.1+0.05) g+(25\times0.0002) g\)
\(=28.0000 g+0.6500 g+0.0050 g\)
\(=28.6550 g\)
আয়তনিক ফ্লাস্কে \(Na_{2}CO_{3}\) স্থানান্তরঃ \(500 mL\) আয়তনিক ফ্লাস্কের মুখে ফানেল বসিয়ে ঐ ফানেলের ওপর ওজন বোতল থেকে প্রায় \(5.3 g\) এর কাছাকাছি \(Na_{2}CO_{3}\) গুঁড়া ধীরে ধীরে বোতলে আঙ্গুলের টোকা দিয়ে ঢেলে নেয়া হয়। এবার ওজন বোতলের মুখে স্টপার যুক্ত করে ২য় ওজন নেয়া হয়।
২য় ওজন নেয়াঃ স্থির অবস্থায় থাকা ব্যালেন্সের বাম পাল্লায় ঐ ওজন বোতলটি রেখে ডান পাল্লা থেকে চিমটার সাহায্যে \(5 g\) ও \(1 g\) ওজন দুইটি তুলে নেয়া হয়, কারণ \(5 g\) এর বেশি \(Na_{2}CO_{3}\) 'ওজন বোতল ' থেকে ঢেলে নেয়া হয়েছে। এবার হ্যান্ডল ঘুরিয়ে ব্যালেন্সকে সচল করা হয়। এখন উভয় পাল্লার সমতা আনার জন্য ডান পাল্লা থেকে \(100 mg\) ও \(50 mg\) ওজন তুলে নিয়ে প্রয়োজনমতো \(20 mg\) ও \(10 mg\) ওজন ডান পাল্লায় রাখা হয়। শেষে \(10 mg\) রাইডারটিকে বিমের \(10\) নং দাগে রাখলে ব্যালেন্সটি সমতা লাভ করে।
এখন,
২য় ওজন \(=(20+2) g+(500+20+10) mg +(10\times0.0002) g\)
\(=22 g+(0.5000+0.0200+0.0100) g +0.0020 g\)
\(=22.0000 g+0.5300 g +0.0020 g\)
\(=22.5320 g\)
আয়তনিক ফ্লাস্কে গৃহীত \(Na_{2}CO_{3}\) এর ওজন \(=(\text{১ম ওজন}-\text{২য় ওজন})\)
\(=28.6550 g-22.5320 g\)
\(=6.123 g\)
এরূপে প্রস্তুত \(Na_{2}CO_{3}\) দ্রবণের মোলার ঘনমাত্রা বা মোলারিটি নিম্নরূপে গণনা করা হয়।
\(Na_{2}CO_{3}\) এর মোলার ঘনমাত্রা, \(M= \frac{\text{গৃহীত } Na_{2}CO_{3}\text{ এর মোল সংখ্যা }}{\text{লিটারে দ্রবণের আয়তন}}\)
\(=\frac{\left(\frac{6.123}{106}\right) mol}{0.5 L}\) ➜ \(Na_{2}CO_{3}\) এর মোলার ভর \(=106 g\)
\(=\left(\frac{6.123}{106\times0.5}\right)mol \ L^{-1}\)
\(=\left(\frac{6.123}{53}\right) mol \ L^{-1}\)
\(=0.1155 \ mol \ L^{-1}\)
অতএব, প্রস্তুত \(Na_{2}CO_{3}\) এর মোলার ঘনমাত্রা \(M=0.1155 \ mol \ L^{-1}\)
মোলার ঘনমাত্রা বা মোলারিটি
Molar density or Molarity
নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় যেমন কক্ষ তাপমাত্রায় কোন দ্রব্যের এক লিটার দ্রবণে ঐ দ্রব্যের যত মোল (বা গ্রাম আণবিক ভর) দ্রবীভূত থাকে, দ্রব্যের ঐ মোল সংখ্যাকে ঐ দ্রবণে ঐ দ্রব্যের মোলার ঘনমাত্রা বা মোলারিটি বলে। অন্য কথায়, স্থির তাপমাত্রায় এক লিটার (১০০০ ঘন সে. মি. ) আয়তনের দ্রবণে দ্রবীভূত দ্রবের মোল সংখ্যাকে দ্রবণের মোলার ঘনমাত্রা বা মোলারিটি বলে।
\(\therefore\) দ্রবণে দ্রব্যের মোলারিটি \(= \frac{\text{মোল এককে দ্রব্যের পরিমাণ}}{\text{লিটার এককে দ্রবণের আয়তন}}\)
\(\therefore\) দ্রবণে দ্রব্যের মোলারিটি \(= \frac{\text{মোল এককে দ্রব্যের পরিমাণ}}{\text{লিটার এককে দ্রবণের আয়তন}}\)
মোলার দ্রবণ
Molar solution
নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় যেমন কক্ষতাপমাত্রায় কোনো দ্রবের এক লিটার দ্রবণে এক মোল দ্রব দ্রবীভূত থাকলে ঐ দ্রবণকে ঐ দ্রবের এক মোলার দ্রবণ বলে। মোলার দ্রবণকে \(1 \ M\) দ্বারা বোঝানো হয় । যেমন, কক্ষ তাপমাত্রায় এক মোল \(Na_{2}CO_{3}\) বা \(106 g \ Na_{2}CO_{3}\) লিটার দ্রবণে দ্রবীভূত থাকলে ঐ দ্রবণকে \(Na_{2}CO_{3}\) এর মোলার দ্রবণ বা, \(1M \ Na_{2}CO_{3}\) দ্রবণ বলে।
সেমিমোলার দ্রবণ
Semimolar solution
নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোনো দ্রব্যের এক লিটার দ্রবণে অর্ধমোল (0.5 mol) দ্রব দ্রবীভূত থাকলে ঐ দ্রবণকে ঐ দ্রব্যের সেমিমোলার (0.5 M) দ্রবণ বলে। যেমন কক্ষ তাপমাত্রায় এক লিটার দ্রবণে \(0.5 mol \ Na_{2}CO_{3}\) বা \(53 g \ Na_{2}CO_{3}\) দ্রবীভূত করা হলে ঐ দ্রবণকে \(0.5M \ Na_{2}CO_{3}\) দ্রবণ বলে।
ডেসিমোলার দ্রবণ
Decimolar solution
নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোনো দ্রব্যের এক লিটার দ্রবণে (0.1 mol) দ্রব দ্রবীভূত থাকলে ঐ দ্রবণকে ঐ দ্রব্যের ডেসিমোলার (0.1 M) দ্রবণ বলে। যেমন কক্ষ তাপমাত্রায় এক লিটার দ্রবণে \(0.1 mol \ Na_{2}CO_{3}\) বা \(10.6 g \ Na_{2}CO_{3}\) দ্রবীভূত করা হলে ঐ দ্রবণকে \(0.1M \ Na_{2}CO_{3}\) দ্রবণ বলে।
প্রমাণ দ্রবণ
Standard solution
প্রাইমারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থ যেমন \(Na_{2}CO_{3}, \ K_{2}Cr_{2}O_{7}\) ইত্যাদি মোলার \(1M\) দ্রবণ, সেমিমোলার (0.5 M) দ্রবণ, ডেসিমোলার (0.1 M) দ্রবণ প্রভৃতির প্রত্যেকটিকে প্রমাণ দ্রবণ বা Standard solution বলে। কারণ প্রমাণ দ্রবণের সঙ্গা মতে, নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় প্রাইমারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থের নমুনা দিয়ে তৈরি করা কোনো দ্রবণের ঘনমাত্রা সঠিকভাবে জানা থাকলে ঐ দ্রবণকে ঐ দ্রব্যের প্রমাণ দ্রবণ বলে।
ডিজিটাল ব্যালেন্স
Digital Balance

2-ডিজিট ব্যালেন্সঃ যে ইলেকট্রনিক ডিজিটাল ব্যালেন্সে কোনো রাসায়নিক বস্তুর ভর এক গ্রামের দশমিক দ্বিতীয় স্থান (0.01 g) পর্যন্ত সঠিকভাবে ওজন করা সম্ভব হয়, তাকে 2-ডিজিট ব্যালেন্স বলা হয়। সাধারণত সেকেন্ডারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থের ওজন করার জন্য 2-ডিজিট ব্যালেন্স ব্যবহার করা হয়। পূর্বে ব্যবহৃত রাফ ব্যালেন্সের স্থলে বর্তমানে 2-ডিজিট ব্যালেন্স ব্যবহৃত হয়।
4-ডিজিট ব্যালেন্সঃ যে ইলেকট্রনিক ডিজিটাল ব্যালেন্সে কোনো প্রাইমারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থের ভর এক গ্রামের দশমিক চতুর্থ স্থান (0.0001 g) পর্যন্ত সঠিকভাবে ওজন করা সম্ভব হয়, তাকে 4-ডিজিট ব্যালেন্স বলা হয়। 4-ডিজিট ব্যালেন্স খুব সংবেদনশীল বা sensitive হওয়ায় রাসায়নিক বিশ্লেষণীয় কাজে ব্যবহৃত প্রমাণ দ্রবণ তৈরিতে সংশ্লিষ্ট পদার্থের সঠিক ওজন নিতে 4-ডিজিট ব্যালেন্স ব্যবহার করা হয়।
ব্যবহারের ক্ষেত্রঃ 2-ডিজিট ব্যালেন্স দ্বারা \(1 g\) এর \(100\) ভাগে এক ভাগ অর্থাৎ \(0.01 g\) ভর পর্যন্ত সঠিকভাবে মাপা যায়। কিন্তু 4-ডিজিট ব্যালেন্স দ্বারা \(1 g\) এর \(10000\) ভাগে এক ভাগ অর্থাৎ \(0.0001 g\) ভর পর্যন্ত সঠিকভাবে মাপা যায়। পূর্বে ব্যবহৃত রাফ ব্যালেন্সের স্থলে 2-ডিজিট ব্যালেন্স ম্যাক্রো ও সেমি মাইক্রো গুণগত বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় বিকারক প্রস্তুতিতে বস্তুর ভর পরিমাপে ব্যবহৃত হয়। যেমন- কস্টিক সোডা (\(NaOH\)) পিলেট, \(Na_{2}CO_{3}, \ KMnO_{4}, \ K_{2}Cr_{2}O_{7}\) অক্সালিক এসিড ইত্যাদি।
অপরদিকে, 4-ডিজিট ব্যালেন্স সেমি মাইক্রো ও মাইক্রো গুণগত ও ভরভিত্তিক আয়তনিক বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় প্রাইমারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থের প্রমাণ দ্রবণ প্রস্তুতিতে বস্তুর ভর পরিমাপে ব্যবহৃত হয়। যেমন- অক্সালিক এসিড [\((COOH)_{2}.2H_{2}O\)], পটাসিয়াম ডাইক্রোমেট (\(K_{2}Cr_{2}O_{7}\)), সোডিয়াম থায়োসালফেট (\(Na_{2}S_{2}O_{3}.5H_{2}O\)) ইত্যাদি।
4-ডিজিট ব্যালেন্সঃ যে ইলেকট্রনিক ডিজিটাল ব্যালেন্সে কোনো প্রাইমারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থের ভর এক গ্রামের দশমিক চতুর্থ স্থান (0.0001 g) পর্যন্ত সঠিকভাবে ওজন করা সম্ভব হয়, তাকে 4-ডিজিট ব্যালেন্স বলা হয়। 4-ডিজিট ব্যালেন্স খুব সংবেদনশীল বা sensitive হওয়ায় রাসায়নিক বিশ্লেষণীয় কাজে ব্যবহৃত প্রমাণ দ্রবণ তৈরিতে সংশ্লিষ্ট পদার্থের সঠিক ওজন নিতে 4-ডিজিট ব্যালেন্স ব্যবহার করা হয়।
ব্যবহারের ক্ষেত্রঃ 2-ডিজিট ব্যালেন্স দ্বারা \(1 g\) এর \(100\) ভাগে এক ভাগ অর্থাৎ \(0.01 g\) ভর পর্যন্ত সঠিকভাবে মাপা যায়। কিন্তু 4-ডিজিট ব্যালেন্স দ্বারা \(1 g\) এর \(10000\) ভাগে এক ভাগ অর্থাৎ \(0.0001 g\) ভর পর্যন্ত সঠিকভাবে মাপা যায়। পূর্বে ব্যবহৃত রাফ ব্যালেন্সের স্থলে 2-ডিজিট ব্যালেন্স ম্যাক্রো ও সেমি মাইক্রো গুণগত বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় বিকারক প্রস্তুতিতে বস্তুর ভর পরিমাপে ব্যবহৃত হয়। যেমন- কস্টিক সোডা (\(NaOH\)) পিলেট, \(Na_{2}CO_{3}, \ KMnO_{4}, \ K_{2}Cr_{2}O_{7}\) অক্সালিক এসিড ইত্যাদি।
অপরদিকে, 4-ডিজিট ব্যালেন্স সেমি মাইক্রো ও মাইক্রো গুণগত ও ভরভিত্তিক আয়তনিক বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় প্রাইমারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থের প্রমাণ দ্রবণ প্রস্তুতিতে বস্তুর ভর পরিমাপে ব্যবহৃত হয়। যেমন- অক্সালিক এসিড [\((COOH)_{2}.2H_{2}O\)], পটাসিয়াম ডাইক্রোমেট (\(K_{2}Cr_{2}O_{7}\)), সোডিয়াম থায়োসালফেট (\(Na_{2}S_{2}O_{3}.5H_{2}O\)) ইত্যাদি।
ডিজিটাল ব্যালেন্সের ব্যবহার বিধি ও কার্যপদ্ধতি
Rules and Procedures for Using Digital Balance
ডিজিটাল ব্যালেন্স-2 ডিজিটঃ ব্যালেন্সটিকে পরিষ্কার সমতল টেবিলের ওপর রাখা হয়। কোনো রাসায়নিক পদার্থের ওজন নেয়ার সময় ঐ রাসায়নিক পদার্থ সরাসরি ব্যালেন্সের প্যানের ওপর রাখা যাবে না। এতে ব্যালেন্সের ক্ষতি হয়। তাই কঠিন রাসায়নিক বস্তুকে ছোট বিকারে বা ওয়াচ গ্লাসে বা শুষ্ক কাগজের টুকরার ওপরে নিয়ে ব্যালেন্সের গোলাকার প্যানের ওপর রাখা হয়। এছাড়া ওজন বোতলেও রাসায়নিক বস্তু নিয়ে ওজন করা হয়। কেবল 4-ডিজিট ব্যালেন্সের বেলায় ওজন বোতল ব্যবহৃত হয়।
এখন ডিজিটাল ব্যালেন্স ব্যবহারের জন্য 'on' (অন) বোতামটি চাপ দিয়ে অপাক্ষা করতে হয়- যতক্ষন না ডিজিটাল পর্দায় জিরো (0.00 g বা 0.0000 g) রিডিং ভেষে ওঠে। এবার ব স্তুর ওজন নেওয়ার জন্য খালি পাত্র বা container যেমন- কাগজের টকরা, খালি ছোট বিকার বা অজন-বোতল ব্যালেন্সের প্যানের ওপর রেখে 'tare' বা 'Zero' বোতামটি চাপ দিতে হয়। তখন খালি পাত্রের ওজন ডিজিটাল ব্যালেন্সের ম্যামোরিতে সংরক্ষিত থাকে, যা পরবর্তী পাত্র ও বস্তুর মোট ওজন থেকে খালি পাত্রের ওজন বাদ পড়ে যায়। তাই এক্ষেত্রেও ডিজিটাল পর্দায় পূর্বের মতো জিরো (0.00 g বা 0.0000 g) রিডিং প্রদর্শিত হয়।
এবার খালি পাত্রের ওপর স্প্যাচুলা (spatula) বা চামচের সাহায্যে আস্তে আস্তে রাসায়নিক বস্তু প্রয়োজনমতো যোগ করে ঐ বস্তুর ভর ডিজিটাল পর্দার রিডিং থেকে রেকর্ড করা হয়। পরে সুইচ অফ করে পাত্রসহ গৃহীত রাসায়নিক বস্তুকে সরিয়ে নেয়া হয়।
ডিজিটাল ব্যালেন্স-4 ডিজিটঃ সূক্ষ্ণ পরিমাপের এরূপ ব্যালেন্সে বস্তুর ভর পরিমাপের সময় বাতাস চলাচলের চাপের প্রভাব মুক্ত রাখতে ব্যালেন্সের গোলাকার প্যানটি কচের দেওয়ালে আবদ্ধ থাকে। তাই ঐ প্যানের ওপর ওজন বোতলসহ বস্তু রাখা এবং নেয়ার জন্য গ্লাস স্লাইডিং এর ব্যবস্থা থাকে। এক্ষেত্রে ওজন বোতলে রাসায়নিক বস্তু নিয়ে ১ম ওজন এবং পরে আয়তনিক ফ্লাস্কের মুখে রাখা ফানেলের ওপর ঐ ওজন বোতলের মুখ খুলে এবং বোতলের গায়ে তর্জনী আঙ্গুলের মৃদু আঘাত করে প্রয়োজনীয় বস্তু ফানেলের ওপর ঢেলে নেয়া হয়। পরে অবশিষ্ট বস্তুর ২য় ওজন নেয়া হয়। এবার খালি পাত্রের ওপর স্প্যাচুলা (spatula) বা চামচের সাহায্যে আস্তে আস্তে রাসায়নিক বস্তু প্রয়োজনমতো যোগ করে ঐ বস্তুর ভর ডিজিটাল পর্দার রিডিং থেকে রেকর্ড করা হয়। পরে সুইচ অফ করে পাত্রসহ গৃহীত রাসায়নিক বস্তুকে সরিয়ে নেয়া হয়।
প্রথমে অজন-বোতলটি শুষ্ক ও পরিষ্কার করে নেয়া হয়। এক টুকরা টিস্যু পেপার বা ভাঁজ করা কাগজ দ্বারা ওজন বোতলকে ধরতে হয়। (হাতের আঙ্গুল দ্বারা সরাসরি ধরা যাবে না; আঙ্গুলের আর্দ্রতা অজন-বোতলে লেগে ভর পরিমাপে ত্রুটি দেখা দেয়।)
এবার সংশ্লিষ্ট রাসায়িনিক বস্তুর গুঁড়া ঐ ওজন-বোতলে নেয়া হয়। এখন ওজন নেয়ার জন্য ব্যালেন্সের 'on' (অন) বোতামটি চাপ দিয়ে ডিজিটাল পর্দায় ( 0.0000 g) রিডিং এ আনা হয়; অথবা 'tare' বোতাম চেপে ( 0.0000 g) রিডিং এ আনা হয়। এখন স্লাইডিং গ্লাস সরিয়ে প্যানের ওপর রাসায়নিক বস্তু ভর্তি ওজন বোতল রাখা হয়। ডিজিটাল পর্দায় প্রদর্শিত রিডিং ১ম ওজনরূপে রেকর্ড করা হয়।
এরপর ওজন বোতল বের করে নিয়া আয়তনিক ফ্লাস্কে রাখা ফানেলের ওপর ওজন-বোতল খুলে কাত করে তর্জনী আঙ্গুলের মৃদু আঘাত করে বা স্প্যাচুলা (spatula) বা ইস্পাতের ছোট চামচ দ্বারা প্রয়োজনমতো রাসায়নিক বস্তু ঢেলে নিয়ে পুনরায় ওজন-বোতলটির ভর মেপে নেয়া হয়। (প্রয়োজনে একাধিক বার অনুরূপভাবে ওজন পরীক্ষা করা যেতে পারে।) শেষ বারের ওজনটি রেকর্ড করা হয়। ১ম ওজন ও শেষ ওজনের পার্থক্য থেকে গৃহীত বস্তুর ভর গণনা করা হয়।
এবার সংশ্লিষ্ট রাসায়িনিক বস্তুর গুঁড়া ঐ ওজন-বোতলে নেয়া হয়। এখন ওজন নেয়ার জন্য ব্যালেন্সের 'on' (অন) বোতামটি চাপ দিয়ে ডিজিটাল পর্দায় ( 0.0000 g) রিডিং এ আনা হয়; অথবা 'tare' বোতাম চেপে ( 0.0000 g) রিডিং এ আনা হয়। এখন স্লাইডিং গ্লাস সরিয়ে প্যানের ওপর রাসায়নিক বস্তু ভর্তি ওজন বোতল রাখা হয়। ডিজিটাল পর্দায় প্রদর্শিত রিডিং ১ম ওজনরূপে রেকর্ড করা হয়।
এরপর ওজন বোতল বের করে নিয়া আয়তনিক ফ্লাস্কে রাখা ফানেলের ওপর ওজন-বোতল খুলে কাত করে তর্জনী আঙ্গুলের মৃদু আঘাত করে বা স্প্যাচুলা (spatula) বা ইস্পাতের ছোট চামচ দ্বারা প্রয়োজনমতো রাসায়নিক বস্তু ঢেলে নিয়ে পুনরায় ওজন-বোতলটির ভর মেপে নেয়া হয়। (প্রয়োজনে একাধিক বার অনুরূপভাবে ওজন পরীক্ষা করা যেতে পারে।) শেষ বারের ওজনটি রেকর্ড করা হয়। ১ম ওজন ও শেষ ওজনের পার্থক্য থেকে গৃহীত বস্তুর ভর গণনা করা হয়।
ডিজিটাল ব্যালেন্স ব্যবহারে সুবিধা
Advantages of using digital balance
ডিজিটাল ব্যালেন্স ব্যবহারে সুবিধাগুলো নিম্নরূপ-
ডিজিটাল ব্যালেন্সে বাইর থেকে পাল্লায় ওজন যোগ করতে হয় না। তাই ওজন বক্সের এক্ষেত্রে কোনো ব্যবহার নেই।
ডিজিটাল ব্যালেন্সে রাইডার ব্যবহারের কোনো প্রয়োজন হয় না।
ডিজিটাল ব্যালেন্সে ওজন নিতে সময়ও কম লাগে।
ডিজিটাল ব্যালেন্সে সঠিকভাবে সরাসরি ওজন করা যায়।
ডিজিটাল ব্যালেন্সে ওজন নিতে 'ব্যাক্তিগত ভূল' বা Personal error এর কোনো সম্ভাবনা নেই। সরাসরি ডিজিটাল রিডিং স্ক্রিন বা পর্দায় ভেসে ওঠে।
ডিজিটাল ব্যালেন্সে বাইর থেকে পাল্লায় ওজন যোগ করতে হয় না। তাই ওজন বক্সের এক্ষেত্রে কোনো ব্যবহার নেই।
ডিজিটাল ব্যালেন্সে রাইডার ব্যবহারের কোনো প্রয়োজন হয় না।
ডিজিটাল ব্যালেন্সে ওজন নিতে সময়ও কম লাগে।
ডিজিটাল ব্যালেন্সে সঠিকভাবে সরাসরি ওজন করা যায়।
ডিজিটাল ব্যালেন্সে ওজন নিতে 'ব্যাক্তিগত ভূল' বা Personal error এর কোনো সম্ভাবনা নেই। সরাসরি ডিজিটাল রিডিং স্ক্রিন বা পর্দায় ভেসে ওঠে।
ডিজিটাল ব্যালেন্স ব্যবহারে সাবধানতা
Caution in using digital balance
ডিজিটাল ব্যালেন্স ব্যবহারে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। যেমন-
4-ডিজিটাল ব্যালেন্সে এটির ধারণ ক্ষমতার বেশি ওজন করা যাবে না।
ওজন নেয়ার সময় ব্যালেন্সের সামনের গ্লাসটি বন্ধ করে ওজন নিতে হয়।
ব্যালেন্সের ক্ষয়কারক সেকেন্ডারি পদার্থ যেমন-কস্টিক সোডার পিলেট, গাঢ় সালফিউরিক এসিড ইত্যাদি ওজন করা যাবে না।
উত্তপ্ত অবস্থায় কোনো রাসায়নিক পদার্থের ওজন নেয়া যাবে না।
ব্যবহারের আগে ও পরে ডিজিটাল ব্যালেন্সের প্যান (pan) বা পাল্লাকে sable ব্রাশ নামক বিশেষ ব্রাশ (camel hair brush) দ্বারা পরিষ্কার করে নিতে হয়।
4-ডিজিটাল ব্যালেন্সে এটির ধারণ ক্ষমতার বেশি ওজন করা যাবে না।
ওজন নেয়ার সময় ব্যালেন্সের সামনের গ্লাসটি বন্ধ করে ওজন নিতে হয়।
ব্যালেন্সের ক্ষয়কারক সেকেন্ডারি পদার্থ যেমন-কস্টিক সোডার পিলেট, গাঢ় সালফিউরিক এসিড ইত্যাদি ওজন করা যাবে না।
উত্তপ্ত অবস্থায় কোনো রাসায়নিক পদার্থের ওজন নেয়া যাবে না।
ব্যবহারের আগে ও পরে ডিজিটাল ব্যালেন্সের প্যান (pan) বা পাল্লাকে sable ব্রাশ নামক বিশেষ ব্রাশ (camel hair brush) দ্বারা পরিষ্কার করে নিতে হয়।
পল-বুঙ্গী ব্যালেন্স এবং ডিজিটাল ব্যালেন্সের মধ্যে পার্থক্য
Difference between Paul-Bungi balance and digital balance

পল-বুঙ্গী ব্যালেন্স | ডিজিটাল ব্যালেন্স |
১। পল-বুঙ্গী ব্যালেন্স হলো ম্যানুয়েল বা হস্তচালিত অ্যানালাইটিক্যাল ব্যালেন্স। | ১। ডিজিটাল ব্যালেন্স হলো স্ক্রিনে সংখ্যা প্রদর্শক বৈদ্যুতিক অ্যানালাইটিক্যাল ব্যালেন্স। |
২। পল-বুঙ্গী ব্যালেন্সে দুইটি পাল্লা থাকে। বাম পাল্লায় ওজন বোতলে রাসায়নিক পদার্থ থাকে, ডান পাল্লায় নির্দিষ্ট ওজনসমূহ রাখা হয়। | ২। ডিজিটাল ব্যালেন্সে কেবলমাত্র একটি টপ লোডিং পাল্লা থাকে। এর ওপর রাসায়নিক পদার্থ ভর্তি ওজন বোতল রাখা হয়। |
৩। বায়ু চলাচলের ধাক্কা মুক্ত রাখতে ব্যালেন্সটিকে কাচের বাক্সে রাখা হয়। | ৩। ডিজিটাল ব্যালেন্সটিকেও বায়ু চলাচলের ধাক্কা মুক্ত রাখতে কাচের বাক্সে রাখা হয়। |
৪। হস্তচালিত পল-বুঙ্গী ব্যালেন্সে ওজন নিতে বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় না। | ৪। ডিজিটাল ব্যালেন্স ব্যবহারে বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। |
৫। পল-বুঙ্গী ব্যালেন্সে ওজন নিতে বেশি সময় প্রয়োজন হয়। | ৫। ডিজিটাল ব্যালেন্সে অল্প সময়ের মধ্যে ওজন নেয়া যায়। |
৬। পল-বুঙ্গী ব্যালেন্সে ওজন করা বস্তুর ওজনের সূক্ষ্ণতা কম থাকে; কারণ 'ব্যাক্তিগত ভুল' হতে পারে। | ৬। ডিজিটাল ব্যালেন্সে ওজন করা বস্তুর ওজনের সূক্ষ্ণতা বেশি থাকে; কারণ 'ব্যাক্তিগত ভুল' এক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। |
Email: Golzarrahman1966@gmail.com
Visitors online: 000004